শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামে করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে জারি হওয়া রুল দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করা হয়েছে।
বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামান ও বিচারপতি জাহিদ সারোয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চে বুধবার এ আবেদন করা হয়।
আবেদনটি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের যে মামলাটি হাইকোর্ট স্থগিত করেছিলেন, সেটা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পরে সুপ্রিম কোর্ট বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চকে দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।
‘এখানে কলকারখানার পক্ষে যিনি মামলাটি দায়ের করেছিলেন, সেই রুল থাকা অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর থেকে কলকারখানার পক্ষ থেকে মামলাটি পরিচালনার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সে কারণে আজকে আমি একটি দরখাস্ত দাখিলের অনুমতি চেয়েছি। আর আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। যেহেতু আপিল বিভাগের নির্দেশনা রয়েছে দুই মাসের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার জন্য, সেই আদেশের কপিটি আমরা আদালতের কাছে দাখিল করলাম।
‘তখন আদালত বলল, আপনাকে অনুমতি দেয়া হলো অ্যাফিডেভিট করার জন্য। ডিলে কনডল করা হলো। মামলাটি কালকে তালিকায় থাকবে।’
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ইউনূসের নামে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে জারি করা রুল দুই মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে গত ৭ জুন নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের নামে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর। ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। পরে মামলার বিবাদীদের হাজির হওয়ার জন্য সমন জারি করে আদালত।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন গ্রামীণ টেলিকমের এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও শাহজাহান। এই তিন আসামিও আলাদাভাবে মামলার আবেদন করেন।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ড. ইউনূসের গ্রামীণ টেলিকম পরিদর্শনে যান। সেখানে গিয়ে তারা শ্রম আইনের কিছু লঙ্ঘন দেখতে পান। এর মধ্যে ১০১ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে স্থায়ী করার কথা থাকলেও তাদের স্থায়ী করা হয়নি। শ্রমিকদের অংশগ্রহণের তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি। এ ছাড়া কোম্পানির লভ্যাংশের ৫ শতাংশ শ্রমিকদের দেয়ার কথা থাকলেও তা তাদের দেয়া হয়নি। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে এ মামলা করা হয়।
মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন ড. ইউনূস। ওই আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে মামলাটি কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
হাইকোর্টের এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আপিল বিভাগ সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে দুই মাসের মধ্যে রুল নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টকে আদেশ দেয়। সেটিই শুনানি করতে বুধবার আবেদন করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান।