ফিলিপাইনের নোবেল বিজয়ী সাংবাদিক মারিয়া রেসা শান্তিতে পাওয়া নোবেল পৃথিবীর সব সাংবাদিককে উৎসর্গ করেছেন। তিনি বলেছেন, তার এই নোবেল শান্তি পুরস্কার পৃথিবীর সব সাংবাদিকের। এছাড়া সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় নিজের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন তিনি। খবর এএফপি’র।
এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেসা বলেন, সত্যিই এই পুরস্কার পৃথিবীর সমস্ত সাংবাদিকের। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য দরকার। আজকের দিনে সাংবাদিক হওয়া খুব কঠিন এবং বিপদজনক।
৫৮ বছর বয়সী রেসা বলেছেন, এই পুরস্কার তার এবং ফিলিপাইনে কাজ করা অন্য সাংবাদিকদের জন্য শারীরিক এবং অনলাইন আক্রমণ থেকে বাঁচাতে রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে।
এই পুরস্কার অ্যাড্রেনালিন ইনজেকশনের মতো জানিয়ে তিনি বলেন, এই যে ‘তাদের বিরুদ্ধে আমরা’ এটা কিন্তু সাংবাদিকরা তৈরি করেনি। এটা তৈরি করেছে ক্ষমতায় থাকা লোকজন যারা নেতৃত্বকে সমাজে বিভাজন তৈরিতে ব্যবহার করতে চায়। আমি আশা করি এই পুরস্কার সাংবাদিকদের নির্ভীকভাবে কাজ করতে উৎসাহ দিবে।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে ও তার সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনাকারী রেসা। বিশেষ করে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের। অধিকার কর্মীরা বলছেন, ফিলিপাইনে মাদকবিরোধী অভিযানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই গরীব মানুষ। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের মধ্যে র্যা পলার একটি যে ওইসব হত্যাকাণ্ডের নৃশংস ছবি প্রকাশ করেছে এবং এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। র্যা পলার ওয়েবসাইটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা। এছাড়া রক্তাক্ত ওই অভিযানকে সম্ভাব্য মানবতাবিরোধী অপরাধ বিবেচনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচারকও পুর্ণাঙ্গ তদন্তের অনুমোদন দিয়েছেন। অন্যান্য সংবাদমাধ্যমও দুতের্তের নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ফিলিপাইন্স ডেইলি ইনকোয়ারার ও টেলিভিশ এবিএস-সিবিএনের লাইসেন্স বাতিল করে গতবছর।
এই প্রসঙ্গে মারিয়া রেসা বলেন, আমাদের বাঁচার আর কোনো উপায় নেই… তাই আমাদেরকে প্রতিরোধ করা সহজ। গত দুই বছরের কম সময়ের মধ্যে আমার বিরুদ্ধে ১০টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
তিনি জানান, এখনো তার বিরুদ্ধে সাতটি মামলা আছে। এর মধ্যে কর ফাঁকির মামলাও আছে যেটাকে তিনি হাস্যকার বলেছেন এবং এই মামলায় জিতবেন বলে জানিয়েছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে সাইবার মানহানির মামলাও আছে।
এইসব মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্ষমতার এই অপব্যবহার কাজ করতো যদি আমি ভয়কে প্রশ্রয় দিতাম এবং এগুলো আমার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতো। আমার জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল ভয়কে জয় করা। নির্ভীক হওয়া মানে ভয় না পাওয়া না, এর মানে হলো কিভাবে আপনি ভয়কে কব্জা করবেন তা জানা। আমি সব সময় মজা করি এবং প্রায়ই বলি সত্যি প্রেসিডেন্ট দুতের্তেকে আমার ধন্যবাদ জানানো উচিত। কারণ ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি জানেন না আপনি কে, যতক্ষণ আপনি এটার জন্য যুদ্ধ না করেন। এখন আমি জানি আমি কে।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার ফিলিপাইনের নিউজ ওয়েবসাইট র্যা পলার সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারিয়া রেসা ও রাশিয়ান সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পেয়েছেন।
ফিলিপাইনের সাংবাদিক ও অধিকার আন্দোলনকর্মীরা রেসার এই পুরস্কারকে দেশটির সাংবাদিকদের জন্য বিশাল এক মাইল ফলক বলে অভিহিত করেছেন। কারণ দেশটি সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক এক দেশ।
আর গণমাধ্যম সমর্থকরা বলছেন, ২০১৬ সালে দুতের্তে ফিলিপাইনের ক্ষমতায় আসার পর থেকে রেসা এবং র্যা পলার অসংখ্য ফৌজদারি মামলা, তদন্ত ও অনলাইন আক্রমণের শিকার হয়েছেন। দুতের্তে র্যা পলারকে ‘ভুয়া নিউজ প্রতিষ্ঠান’ বলে মন্তব্য করেছিলেন এবং রেসাকে অনলাইনে অপমানজনক বার্তার শিকারে পরিণত করেছিলেন।