লকডাউনের আজ রোববার চলছে তৃতীয় দিন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার সড়কে মানুষের সঙ্গে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। ব্যাংকসহ জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এদিন বের হয়েছেন বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন।
সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সব সড়কেই প্রাইভেট কার চলছে। কিছু প্রতিষ্ঠানের ভাড়া করা বাস ও পণ্যবাহী গাড়ি চলতে দেখা গেছে। সড়কে থাকা বেশির ভাগ গাড়িই জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। তবে কেউ বিনা প্রয়োজনে বের হয়েছেন কি না, ব্যারিকেড বসিয়ে যাচাই করে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
গত শুক্রবার কঠোরতম লকডাউন শুরুর পর দুদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় কিছুটা শিথিলতা দেখা গেলেও রোববার ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ব্যারিকেড বসিয়ে যানবাহনগুলোকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে তারা। গাড়ি ছাড়া যারা বের হয়েছেন, তারাও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়ছেন।
রোববার গাবতলী হয়ে ঢাকামুখী সব যানবাহনকে থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হেঁটে গাবতলী ব্রিজ পার হয়ে অনেককে ঢাকা আসতে দেখা যায়। গাবতলী ব্রিজের পাশে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক মো. দুলাল হোসেন রোববার সকালে বলেন, ‘রাস্তায় মানুষ বেড়েছে, সড়কে গাড়িও বেড়েছে। ব্যাংকের লোকজনই বেশি ঢাকায় আসছেন। আমরা সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মাস্ক না পরে গাবতলী ব্রিজ দিয়ে হেঁটে যারা ঢাকা আসছিলেন, পুলিশ তাদের সবাইকে একটি করে মাস্ক দিচ্ছে।’
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে, বিজয় সরণি, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাশে, বনানীসহ রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। রোববার সকাল থেকে প্রতিটি চেকপোস্টেই যানবাহনের ভিড় দেখা যায়। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনের চেকপোস্টে যানবাহনের লম্বা লাইন পড়েছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে যানবাহনের জটে আটকা পড়েছেন ব্যাংক কর্মকর্তা সুমন মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘মতিঝিল যাব কিন্তু এখানে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে আটকে আছি। চেকপোস্ট পার হতে আরও ১৫ মিনিট লাগবে বলে মনে হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ১৩ জুলাই বিধিনিষেধ আরোপ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ওই আদেশে ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছিল ঈদের কারণে। ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল ওই ঘোষণায়।
আরোপিত বিধিনিষেধের আদেশে যা রয়েছে
১. সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে।
২. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
৩. শপিং মল/মার্কেটসহ সব দোকানপাট বন্ধ থাকবে।
৪. সব পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে।
৫. সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে।
৬. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক বিবাহত্তোর অনুষ্ঠান (ওয়ালিমা), জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
৭. বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৮. ব্যাংক-বিমা/আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
৯. সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্ম
স্থলে অবস্থান করবেন এবং দাফতরিক কাজগুলো ভার্চুয়ালি (ই-নথি, ই-টেন্ডারিং, ই-মেইল, এসএমএস, হোয়াটঅ্যাপসহ অন্যান্য মাধ্যম) সম্পন্ন করবেন।
১০. আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন: কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন/বিক্রি, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, সিটি করপোরেশন/পৌরসভা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম), সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
১১. বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
১২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি/কাভার্ডভ্যান/নৌ-যান/পণ্যবাহী রেল/ফেরি এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১৩. বন্দরগুলো (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসগুলো এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে।
১৪. কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
১৫. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনা, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১৬. টিকা কার্ড প্রদর্শন সাপেক্ষে টিকা নেওয়ার জন্য যাতায়াত করা যাবে।
১৭. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রি (অনলাইন/টেকওয়ে) করতে পারবে।
১৮. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।
১৯. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দেবে।
২০. ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠপর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
২১. জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি/কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি সময় নির্ধারণ করবেন। সেইসঙ্গে স্থানীয়ভাবে বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগগুলো এ বিষয়ে মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
২২. জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠপর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
২৩. স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবেন।