কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শনিবার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিনা প্রয়োজনে ঘরের বাইরে আসায় রাজধানীতে ৩৮৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, এদিন পুলিশ ভ্রাম্যমাণ আদালত ১৩৭ জনকে ৯৫ হাজার ২৩০ টাকা জরিমানা করেছেন। ট্রাফিক বিভাগ ৪৪১টি যানকে মোট ১০ লাখ ৮৩ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।
লকডাউন বাস্তবায়নে পুলিশের পাশাপাশি মাঠে তৎপর র্যাব সদস্যরা। কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সারাদেশে ১৮৬টি চেকপোস্ট পরিচালনা করে র্যাব ।এ সময় টহল দেয় র্যাবের ১৮০টি দল।
জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি র্যাবের ২৭টি ভ্রাম্যমাণ আদালতও অভিযান চালায়। বিধিনিষেধ অমান্য করায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২১২ জনকে ১ লাখ ৯১ হাজার ৪৭০ টাকা জরিমানা করা হয়।
কেউ মানছেন, কেউ দেখান অজুহাত
করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চলমান কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানবাহনের চাপ ছিল কম। চোখে পড়েছে শুধু রিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি। কিছু ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গাড়িতে ভাড়ায় যাত্রী বহনের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
তবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে কড়া নজরদারি রেখেছিল পুলিশ, র্যাব,সেনাবাহিনী ও বিজিবি। তাই ছাড় পাননি আইন অমান্যকারীরা।
কারওয়ান বাজার মোড়ে কর্তব্যরত সার্জেন্ট মতিউর রহমান বলেন, অনেকে ঈদের ছুটি কাটিয়ে এখনও ঢাকায় ফেরেননি, আবার অনেকে ঢাকায় থাকলেও ঘরেই রয়েছেন। এ কারণে মূল সড়কে যানবাহন ও জনচলাচল কম রয়েছে।
আশার ব্যাপার হলো, এবার মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না।
শনিবার দুপুরে কারওয়ান বাজার মোড়ে চেকপোস্টে একটি প্রাইভেটকার থামান কর্তব্যরতরা। আরোহী নিজেকে চিকিৎসক হিসেবে পরিচয় দেন। তবে যাচাইয়ের স্বার্থে পুলিশ সদস্য জানতে চান, তিনি আসলেই চিকিৎসক কিনা, এমন কোনো পরিচয়পত্র আছে? এতে ওই ব্যক্তি উত্তেজিত হয়ে পুলিশের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পরেন। পরে অবশ্য তিনি পরিচয়পত্র দেখান এবং উপস্থিত জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত করেন।
ফার্মগেট মোড়েও রয়েছে পুলিশের চেকপোস্ট। সেখানে পুলিশের সামনেই ‘জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়’ লেখা একটি বাস থেমে ভাড়ার বিনিময়ে বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা বলে লোক তুলছিল। পুলিশ তৎপর হওয়ার আগেই বাসটি চলে যায়।
এই পয়েন্টে দায়িত্ব পালন করা সার্জেন্ট রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশকে নানাভাবে ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেই চেষ্টা সফল হচ্ছে না। আবার মানবিক কারণে অনেককে ছেড়ে দিতে হয়। অনেকেই আত্মীয়-স্বজনের অসুস্থতা বা মৃত্যুর কথা বলেন- তাৎক্ষণিকভাবে এত কিছু যাচাই করার সুযোগ থাকে না। আবার তাদের বক্তব্য সঠিক হলে আটকে রাখাটাও ঠিক হবে না।
পুলিশের এই কর্মকর্তা জানালেন, চেকপোস্টে থামানোর পর কেউ কেউ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বলেন, তবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে দেখা যায় তা ভুঁয়া।
রফিকুল ইসলাম বলেন, একটি ঘটনায় ২০১৭ সালের একটি প্রেসক্রিপশন দেখান এক ব্যক্তি। রোগী কোথায় জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, বাড়িতে রয়েছে। তাহলে ডাক্তার কীভাবে দেখবেন? জবাবে ওই ব্যক্তি জানান, ভার্চুয়ালি দেখবেন ডাক্তার।
ভাড়ায় চালিত গাড়িতে চলছে যাত্রী পরিবহন
লকডাউনে ভাড়ায় যাত্রীবাহী যান চলাচল নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী বহন করা হচ্ছে।
ময়মনসিংহের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ফিরোজ হাসান জানান, ঈদের ছুটিতে ঢাকায় এসেছিলেন। তবে রোববার জরুরিভিত্তিতে তাকে কর্মস্থলে যেতে বলা হয়েছে। কীভাবে যাবেন কোনো ধারণা ছিল না।
শনিবার সকালে বের হওয়ার পর আগারগাঁওয়ে ভাড়ায় চালিত একটি মোটরসাইকেল পান। ৪৫০ টাকা ভাড়ার বিনিময়ে তাকে আবদুল্লাহপুর পৌঁছে দেন চালক। পথে কোথাও তাকে পুলিশি বাধার মুখে পরতে হয়নি।
পরে হেঁটে টঙ্গী ব্রিজ পার হয়ে তিনি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারে ময়মনসিংহ পৌঁছান।
বিভিন্ন পয়েন্টে সন্দেহজনক এমন কিছু প্রাইভেটকার আটকানো হয়েছে বলে জানালেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে তারা সবাই নানারকম জরুরি কাজের কথা জানিয়েছেন। ফলে বেশিরভাগই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।