রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানা এলাকার আরব আলীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহামগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা জমি দখল, চাঁদাবাজি, ও চুক্তিতে কিলিং মিশনে অংশ নিতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- মো. সাহজামান ওরফে সাবু, মো. দুলাল প্যাদা ও মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে সুজন। গতকাল বুধবার ধারাবাহিক অভিযানের মাধ্যমে চাঁদপুর ও রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। তাদের বিরুদ্ধে পল্লবী থানায় মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র আইনে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ক্যান্টনমেন্ট থানার পশ্চিম মাটিকাটা এলাকার পানি ও সুয়ারেজ লাইন ঠিকাদার আরব আলীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এই ঘটনায় চাদঁপুর জেলার হাইমচর থানার মিয়া বাজার ও রাজধানীর পল্লবী এলাকায় ধারাবাহিক অভিযানে অস্ত্র ও মাদকসহ ‘‘কন্ট্রাক্ট শুটার টিমের’’ সদস্য সাবু, দুলাল ও সুজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলাটি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। গোয়েন্দা সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত, সিসি ক্যামেরার ভিডিও চিত্র ও তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অভিযুক্তদের অবস্থান শনাক্ত করা হয়।’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, গতকাল বুধবার চাঁদপুর হাইমচর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে পল্লবী থানার কালশী বাউনিয়াবাধস্থ তার বাসা হতে ছয় চেম্বারবিশিষ্ট একটি রিভলবার ও এক হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়। ধারাবাহিক অভিযানে কালশী এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত দুলাল ও সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ২ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ করা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ সকল সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা বিদেশে পালিয়ে থাকা সন্ত্রাসী ইব্রাহীম এবং যুবরাজের তত্ত্বাবধানে থেকে ঢাকা মহানগরীর ভাষানটেক, ক্যান্টনমেন্ট ও পল্লবী থানা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় মাটি ভরাট, বিতর্কিত জায়গায় জমির দখল-বেদখল এবং গ্যাস, পানি ও সুয়ারেজ লাইন তৈরির কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজি করতেন।’
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ সকল সন্ত্রাসীরা আদায়কৃত চাঁদার টাকা, ইয়াবা বিক্রির টাকা নিয়ে পদ্মা-মেঘনার দুর্গম চর এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করতেন।’ চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও কন্ট্রাক্ট শুটিংয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্ত্রাসীদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য প্রদানের জন্যে সকলকে অনুরোধ জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ক্যান্টনমেন্ট থানার পশ্চিম মাটিকাটা এলাকাবাসীর টাকায় সুয়ারেজ লাইনের মেরামতের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয় পানির লাইন ও সুয়ারেজ ঠিকাদার আরব আলীকে। কাজ চলাকালীন সন্ত্রাসীরা আরব আলী এবং নির্মাণ শ্রমিকদের কাছে চাঁদা দাবি করেন। আরব আলী টাকা দিতে অস্বীকার করলে গত ৩০ মার্চ দুপুর সোয়া একটায় ক্যান্টনমেন্ট থানার ৩৩/এ নম্বর বাসার সামনে আরব আলীকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা উপর্যপুরি গুলি চালায়।
এ সময় উপস্থিত বুদ্ধি খাটিয়ে আরব আলী শুয়ে পড়ে কোনো রকমে নিজের জীবন রক্ষা করেন। তবে তার ডান পা ও উরু গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় গত ৩০ মার্চ ক্যান্টনমেন্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী।