প্রতিনিধি,টঙ্গী(গাজীপুর)
গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার (২ ফেব্রæয়ারি) থেকে শুরু হচ্ছে মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। বাদ ফজর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে তাবলিগ জামাতের ইজতেমা। বৃহস্পতিবার বাদ ফজর থেকে শুরু হয়েছে আঞ্চলিক বয়ান। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মুসল্লিরা দলে দলে ইজতেমা ময়দানে আসছে। শুক্রবার দেশের বৃহত্তর জুমা নামাজ ইজতেমা ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে। মুসল্লিদের পদচারণে মুখর হয়ে উঠছে তুরাগতীর।ইতি মধ্যে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশাল এলাকা মুসল্লিদের দ্বারা পরিপূর্ন হয়ে গেছে। বিশ^ইজতেমায় মুসল্লিদের আসা অব্যাহত রয়েছে। রোববার আখেরি মোনাজাত পর্ষন্ত মুসল্লিদের আসা অব্যাহত থাকবে। ইতিমধ্যেই ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান। প্রথম পর্বের ইজতেমায় মাওলানা জোবায়ের অনুসারীরা এবং দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা অংশ নেবেন।
বিশ^ইজতেমায় আয়োজক কমিটির সদস্যরা আগত মুসল্লিদের তাদের জন্য নির্ধারিত খেত্তায় অবস্থান নেওয়ার অনুরুদ করেছেন। ইজতেমায় অংশ নেওয়া তাবলিগের সাথীরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হলো-গাজীপুর (খিত্তা-১), টঙ্গী (খিত্তা-২, ৩ ও ৪), মিরপুর (খিত্তা-৫-৬), সাভার (খিত্তা-৭-৮), মোহাম্মদপুর (খিত্তা-৯), কেরানীগঞ্জ (খিত্তা-১০-১১), কাকরাইল (খিত্তা-১২,১৩,১৪,১৫, ১৮,২০, ২১), যাত্রাবাড়ী (খিত্তা-১৬,২৬,২৮), ডেমরা (খিত্তা-১৭) ধামরাই (খিত্তা-২৭), দোহার (খিত্তা-৩০)।
রাজশাহী (খিত্তা-১৯), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (খিত্তা-২২), নাটোর (খিত্তা-২৪), নওগাঁ (খিত্তা-২৩), নড়াইল (খিত্তা-৪০), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-২৯), টাঙ্গাইল (খিত্তা-২৫)।
রংপুর (খিত্তা-৩১), গাইবান্ধা (খিত্তা-৩৪), লালমনিরহাট (খিত্তা-৩৬), মুন্সীগঞ্জ (খিত্তা-৪১), যশোর (খিত্তা-৪৬), নীলফামারী: (খিত্তা-৩২), বগুড়া (খিত্তা-৩৫), জয়পুরহাট (খিত্তা-৩৩), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-৩৮-৩৯),
ফরিদপুর (খিত্তা-৬২), ভোলা (খিত্তা-৪৪), নরসিংদী (খিত্তা-৪৫), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৪৭), বাগেরহাট (খিত্তা-৪৮), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৫৪), মেহেরপুর (খিত্তা-৪৭), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৪৯), ময়মনসিংহ (খিত্তা-৫৫,৫৩), শেরপুর (খিত্তা-৫৬), জামালপুর (খিত্তা-৫১,৫২), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৫৯), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-৫৮), নেত্রকোনা (খিত্তা-৫৭), ঝালকাঠি (খিত্তা-৪৩), বান্দরবান (খিত্তা-৫৭), বরিশাল (খিত্তা-৪২)।
পিরোজপুর (খিত্তা-৬৫), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৬৬), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৪), সিলেট (খিত্তা-৬৭), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৬৮), ফেনী (খিত্তা-৬৯), নোয়াখালী (খিত্তা-৭০), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৭১), চাঁদপুর (খিত্তা-৭২), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (খিত্তা-৭৩)।
খুলনা (খিত্তা-৭৪), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৫), বরগুনা (খিত্তা-৭৬), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৭৭-৭৮), কুমিল্লা (খিত্তা-৭৯), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৭৬), রাজবাড়ী (খিত্তা-৯০), মাদারীপুর (খিত্তা-৮৮), শরীয়তপুর (খিত্তা-৮৯), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-৮৫), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৮১), দিনাজপুর (খিত্তা-৩৭), পাবনা (খিত্তা-৮৪), পঞ্চগড় (খিত্তা-৮৭)।
বয়ানে যারা অংশ নেবেন: বৃহস্পতিবার বাদ জোহর মাওলানা রবিউল হকের পর বাদ আসর মাওলানা ফারুক, বাদ মাগরিব মাওলানা ইব্রাহীম দেওলা বয়ান করবেন। তবে আগামীকাল শুক্রবার ফজর নামাজের পর আনুষ্ঠানিকভাবে বয়ানের মাধ্যমে শুরু হবে ইজতেমা।
আগামীকাল শুক্রবার ফজরের পর বয়ান করবেন মাওলানা আহম্মেদ বাটলা, সকাল ১০টায় তালিম করবেন মাওলানা জিয়াউল হক। জুমার নামাজে ইমামতি করবেন মাওলানা যোবায়ের। বাদ জোহর বয়ান করবেন জর্ডানের খতিব ওমর, বাদ আসর মাওলানা যোবায়ের ও মাগরিবের পর মাওলানা আহম্মেদ লাট বয়ান করবেন।
প্রথম ধাপে ইজতেমা আয়োজক কমিটির গণমাধ্যম সমন্বয়ক মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বৃহস্পতিবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। আখেরি মোনাজাতের আগপর্যন্ত এভাবেই প্রতিদিন পর্যায়ক্রমে শীর্ষ মুরুব্বিরা বয়ান করবেন।
শনিবার বাদ ফজর মাওলানা আব্দুর রহমান, বাদ জোহর মাওলানা ইসমাইল গোদরা, বাদ আসর মাওলানা যোহারুল হাসান, বাদ মাগরিব মাওলানা ইব্রাহিম।
রোববার বাদ ফজর বয়ান করবেন মাওলানা জিয়াউল হক, সকাল ১০টায় হেদায়েতি বয়ান শেষে বাংলাদেশের মাওলানা যোবায়ের প্রথম ধাপের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন।
বিদেশী মেহমান: বিদেশী ক্যাম্পের নিয়োজিত জিম্মাদার জানান,এরই মধ্যে ৩৬ দেশের ৭৫৯ জন বিদেশি মেহমান এখন ইজতেমা ময়দানে অবস্থান করছেন। ৩৬টি দেশের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, কুয়েত, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, জাপান, ওমান, কানাডা, মোজাম্বিক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কিরগিজস্তান, সিঙ্গাপুর, ইতালি, জর্দান ও যুক্তরাজ্য অন্যতম।তিনি আরো বলেন,বিদেশী মেহমানদের বাংলাদেশে আসা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মেহমানদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ইজতেমা প্রশাসন। বিদেশি মেহমানদের খিত্তাকে ঘিরে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। বিদেশি খিত্তার পাশে পুলিশ, র্যাবসহ সব বাহিনীর উপনিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মেহমানদের থাকা-খাওয়া, যাতায়াত ও ভ্রমণের ওপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
প্রথম ধাপে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ৫ হাজার ৪০০ জন সদস্য।গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহাবুব আলম এই তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্টেডিয়ামে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে এক সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এই তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে মাহাবুব আলম বলেন, বৃস্পতিবার দুপুর থেকেই পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্বে মাঠে নেমেছে। পুরো ইজতেমার ময়দানে ৫ হাজার ৪০০ জন পুলিশ সদস্য কাজ করবেন। পাশাপাশি ইজতেমা এলাকায় ট্রাফিক কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরা ব্যবহার করে বিভিন্ন যানবাহনের গতিবিধি মনিটরিং করা হচ্ছে।পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, র্যাবের একাধিক ইউনিটও ইজতেমা ময়দানে কাজ করছে। বিভিন্ন বিভাগের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পুরো ইজতেমা এলাকা নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে।
ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান গতকাল বৃস্পতিবার টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ পরিদর্শন করেছেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় ইজতেমা ময়দানে স্থাপিত হামদর্দের ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধন শেষে জেলা প্রশাসনের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চান বিশ্ব ইজতেমায় দুই গ্রুপ এক হোক। বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে হয়নি। বাংলাদেশে এর আয়োজন হচ্ছে। তাই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা আশা করি, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ব ইজতেমার দুটি পর্ব সমাপ্ত হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্ব ইজতেমা নির্বিঘ্ন করতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। মুসল্লিদের সেবা ও নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাবসহ সংশ্লিষ্ট সব দপ্তর নিয়োজিত রয়েছে। এরপর মন্ত্রী বিদেশি খিত্তা পরিদর্শন করে বিদেশি মেহমানদের শুভেচ্ছা জানান।এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মো. বসিরুল আলম, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম, বিশ্ব ইজতেমার প্রধান সমন্বয়কারী প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান, সমন্বয়কারী আবুল হাসনাত প্রমুখ।
মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম: টঙ্গী শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে ইজতেমা উপলক্ষ্যে অস্থায়ীভাবে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবায় বক্ষব্যাধি/অ্যাজমা ইউনিট, হৃদরোগ, ট্রমা (অর্থোপেডিক), বার্ন, ডায়রিয়া ইউনিট, স্যানিটেশন টিম ও ২০টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
এছাড়াও চক্ষু, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ ১০০ চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমাকে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে গাজীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো: জাহিদ আহসান রাসেল ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জায়েদা খাতুন, মেয়রের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র আলহাজ্ব এড. মো: জাহাঙ্গীর আলম প্রতিদিন ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতির খোঁজখবর নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, আগামী ৪ ফেব্রæয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম ধাপ। চার দিনের বিরতি দিয়ে ৯ ফেব্রæয়ারি শুরু হবে দ্বিতীয় ধাপ। ১১ ফেব্রæয়ারি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার এবারের আসর।