প্রতিনিধি,টঙ্গী (গাজীপুর)
সংঘর্ষের ঘটনায় গাজীপুরে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। মাওলানা জুবায়ের ও মাওলানা সাদের অনুসারীদের কেউই মাঠে প্রবেশ করতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোনো পক্ষকে ইসলামের স্বার্থে উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানানো হয়েছে। গতকাল বুধবার তাবলিগের দুই পক্ষের হতাহতের ঘটনায় সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়াও রাজধানীর কামারপাড়া, আব্দুল্লাহপুর, উত্তরা সেক্টর-১০ এবং সংলগ্ন তুরাগ নদীর দক্ষিণ, পশ্চিম এলাকায় যে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা, বিক্ষোভ ইত্যাদি পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ডিসি (মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশনস) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনার প্রেক্ষিতে ইজতেমার তিন কিলোমিটারের মধ্যে একজনের বেশি ব্যক্তির চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। গতকাল বুধবার বেলা দেড়টায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই আদেশ জারি করে।আদেশে বলা হয়, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ আইন ২০১৮ এর ৩০ ও ৩১ ধারায় পুলিশ কমিশনারকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে অদ্য ১৮/১২/২০২৪ তারিখ বেলা ২ টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় নিম্নলিখিত আদেশ বলবৎ থাকবে।
এতে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানসহ আশপাশের তিন কিলোমিটার এলাকার মধ্যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে ঘোরাফেরা জমায়েত এবং কোন মিছিল সমাবেশ করতে পারবে না।
এদিকে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান থেকে মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা বিশ্ব ইজতেমার মাঠ ছাড়ার পর সরকার ওই মাঠের দায়িত্ব নেবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গতকাল বুধবার সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের পর সাদ অনুসারী মাওলানা রেজা আরিফ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মঙ্গলবার গভীররাতে মাঠ দখল নিয়ে মাওলানা সাদ ও জুবায়েরপšি’ অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন।নিহতরা হলেন- বা”চু মিয়া (৭০) গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া থানার এগারসিন্দু ও বেলাল (৬০) বাবা আ. সামাদ, ঢাকার দক্ষিণ খানের বেড়াইদ এলাকায়। আরেকজনের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
আহতরা হলেন- আ. রউফ (৫৫), মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুরুল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২), সাহেদ (৪৪), উকিল মিয়া (৫৮), পান্ত (৫৫) টঙ্গী, খোরশেদ আলম (৫০) বেলাল (৩৪), আনোয়ার (৫০), আবু বক্কর (৫৯), আরিফুল ইসলাম (৫০), আনোয়ার (২৬), আনোয়ার (৭৬), ফোরকান আহমেদ (৩৫), আ. রউফ (৫৫) মজিবুর রহমান (৫৮), আ. হান্নান (৬০), জহুর“ল ইসলাম (৩৮), আরিফ (৩৪), ফয়সাল (২৮), তরিকুল (৪২), সাহেদ (৪৪)।
¯’ানীয় সূত্র জানায়, রাত ৩টার দিকে সাদপš’ীরা তুরাগ নদীর পশ্চিম তীর থেকে কামারপাড়া ব্রিজসহ বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ইজতেমা মাঠে প্রবেশ করতে থাকে। এসময় মাঠের ভেতর থেকে যোবায়ের পš’ীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। জবাবে সাদপš’ীরাও পাল্টা হামলা চালায়। একপর্যায়ে সাদপš’ীরা মাঠে প্রবেশ করলে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।এতে তিনজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সাদপš’ীদের প্রভাবশালী মুরুব্বি মুয়াজ বিন নূর এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, আমরা এখন ইজতেমা মাঠের নিয়ন্ত্রণে আছি। যোবায়েরপš’ীদের আক্রমণে আমাদের তিন ভাই শহীদ হয়েছেন। ময়দানে অনেক যোবায়েরপš’ী চাকু ও ছোড়াসহ আটক হয়েছে বলে নূরের দাবি।
এদিকে ইজতেমা মাঠে সংঘর্ষে হতাহতদের টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সিনিয়র ব্রাদার হাফিজুল ইসলাম বলেন, নিহত ও আহতদের খবর নিশ্চিত করে বলেছেন, এ পর্যন্ত তিনজন নিহত ও অসংখ্য লোক আহত হয়েছেন।
টঙ্গী পশ্চিম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসকন্দার হাবিব বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা তিনজন নিহতের তথ্য পেয়েছি। ঘটনা¯’লে আইনশৃঙ্খলা পরি¯ি’তির নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে প্রশাসন।