নির্ধারিত দিন ২৫ জুন শনিবার খুলে দেয়া হবে সক্ষমতার বহুল কাঙ্ক্ষিত এই মাহেন্দ্রক্ষণ পদ্মা সেতু। মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় এবং শরীয়তপুরের জাজিরায় উভয় প্রান্তে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে গেছে পদ্মাপাড়ে। একইসঙ্গে
উভয়পাড়ে চলছে সাজ সাজ রব। বিশেষ করে মাওয়া এলাকায় সড়কের দুইপাশে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে লাল সবুজ, নিয়ন আলোয় আলোকিত হয়ে গেছে।
এ সব এলাকার মানুষের মধ্যেও একরকম উৎসবের আমেজ বয়ে যাচ্ছে। ছোট বড় সকল নেতা-নেত্রীর ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। শিমুলিয়া ঘাট ও মাওয়া বাজারের চারপাশ। মাওয়া প্রান্তের খানবাড়ি নামক এলাকায় একটি প্রস্তুত করা হয়েছে জনসভার মঞ্চ। জনসভার এই মঞ্চটি তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতুর আদলে। উদ্বোধনের দিন মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার এলাকায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জনসভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে পদ্মা সেতুর আদলেই তৈরি করা হয়েছে জনসভার মঞ্চ।
শনিবার সকাল ১০টায় উদ্বোধন হচ্ছে দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার জনগণসহ উত্তরের দেশবাসী। এই দিনটিতে দেশের প্রথম এবং স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসভার আয়োজন করবেন আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা কর্মীগণ। দশ লক্ষাধিক মানুষ এ জনসভায় যোগ দেবে বলে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। এছাড়া উদ্বোধনের পর পদ্মা সেতুর দুই প্রান্তে টানা পাঁচদিন চলবে আনন্দ আয়োজন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুদিনের স্বপ্ন উত্তাল পদ্মায় হবে সেতু। সে স্বপ্ন পূরণ এখন দ্বোরগোড়ায়।
পদ্মা সেতু নির্মাণ যেমন প্রতিপক্ষের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জে সেতুর দুই পাড়ের জবাব, একইভাবে প্রাকৃতিক বাঁধা জয় করে প্রকৌশলীদের দক্ষতার বিজয়ও। তাই পদ্মা জয়ের বর্ণাঢ্য উদযাপন সরকারের পাশাপাশি হবে দলীয়ভাবে, এই সেতুকে ঘিরে। ২৫ জুন মাওয়া ও জাজিরা পদ্মার দুই পাড়েই থাকছে আয়োজন। মাওয়াতে সকাল দশটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করবেন। মাওয়ার খানবাড়ি নামক এলাকায়।
এরপর এখানে সুধী সমাবেশ হবে। জাকজকমপূর্ণ উদ্বোধন করতে প্রস্তুতির কোন ঘাটতি রাখছে না সেতু বিভাগ। পদ্মা সেতুর সরাসরি সুফলভোগী হবে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। তাই ওপাড়ে উচ্ছ্বাসটাও বেশি। আর উদ্বোধনী উদযাপন এ প্রান্তেই হবে বর্ণাঢ্য। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে কাঠালবাড়ি পয়েন্টে সকাল এগারোটায় শুরু হবে জনসভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সভায় আশেপাশের জেলাসহ দক্ষিণের ২১ জেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যোগ দেবে। তাই পদ্মা পাড় জনসমুদ্রে রূপ নেবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
সেতুর কাজ যখন শুরু হয় নদীর তলদেশে মাটির বৈচিত্র্য আচরণ দেখতে পায় প্রকৌশলীরা যার ফলে পিছিয়ে যায় সেতুর কাজ এক বছর, শুরুর পর থেকে আলোচনা সমালোচনা কম হয়নি তবুও বন্ধ হয়নি পদ্মা সেতুর কাজ। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, সেতু উদ্বোধন করে সব সমালোচনার জবাব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এদিকে, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনকে ঘিরে সারা দেশে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বড় পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান প্রচার ছাড়াও থাকছে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এখন চলছেে শেষ মুহূুর্তের প্রস্তুতি। বিভিন্ন জেলার মধ্যেই ছেয়ে গেছে নানা রংয়ের ব্যানার ফেস্টুনে। ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পয়েন্টে পয়েন্টে বসানো হচ্ছে বড় পর্দা। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের ক্ষণটি স্মরণীয় রাখতে এই উদ্যোগ। মুন্সীগঞ্জের লৌহজং চোখে পড়বে বড় বড় তোরণ আর আলোকসজ্জায়। নগরীর ১০ উপজেলার ২টি স্থানে বড় পর্দায় দেখানো হবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
এছাড়াও মাদারীপুরের পাশের জেলা ফরিদপুরেও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রয়েছে দুদিনের নানা আয়োজন। মাওয়া খুলনা দেশরত্ন শেখ হাসিনার নিজ উদ্যোগে চ্যালেঞ্জের এই পদ্মাসেতু সারাদেশে সড়ক-মহাসড়কে শোভা পাচ্ছে বিল বোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে লোকজ মেলাসহ নানা আয়োজন। এছাড়া, দেশের অন্যান্য জেলাতেও পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা।
মাওয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফ হোসেন খান বলেন, সারাদেশে করোনা বিস্তারকালে দেশের বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো বন্ধ হয়েছিল তবে পদ্মাসেতুর কাজ বন্ধ হয়নি, যার ফলে নির্ধারিত সময়ে উদ্বোধন করা হচ্ছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে দুদিন ধরেই শুরু হয়েছে সাজসাজ রব এবং আলোকসজ্জা।