চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ আরোহীর প্রাণহানির পুরো দায় মাইক্রোচালকের বলে মনে করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঘটনাস্থলে থাকা গেটকিপার মো. সাদ্দামকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। আর মাইক্রোচালক নিহত হয়েছেন।
উপজেলার বড়তাকিয়া রেলস্টেশন এলাকায় শুক্রবার বেলা সোয়া ১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা মো. আনসার আলী জানান, মাইক্রোবাস লাইন থেকে সরিয়ে নিলে প্রায় ৪ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল সেখানে স্বাভাবিক হয়।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিঞা বলেন, ‘সেখানে রাস্তায় ক্রসিংয়ে সাদ্দাম নামের একজন গেটকিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি দাবি করেছেন যে সময়মতোই ক্রসিং বার ফেলেছিলেন। তার কথা অমান্য করে মাইক্রোবাসের চালক বারটি তুলে রেললাইনে গাড়ি তুলে দেয়। এতেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গেটকিপার সাদ্দামকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), চট্টগ্রাম নাজিম উদ্দিন।
তিনি জানান, সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠিত এই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’
মাইক্রোবাসে থাকা যাত্রীদের বাড়ি হাটহাজারীর চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের আমানবাজার এলাকায়।
এখন পর্যন্ত নিহতদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় জানা গেছে।
তারা হলেন ওয়াহিদুল আলম জিসান, রিদোয়ান চৌধুরী, জিয়াউল হক সজিব, রাকিব বিন খান, মারুফ, হিসাম, হাসান, আয়াত ও গোলাম মোস্তফা নিরু।
এর মধ্যে গোলাম মোস্তফা মাইক্রোবাসের চালক ছিলেন বলে জানান মীরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন।
আহতরা হলেন তৌকিদ ইবনে শাওন, তসমির পাভেল, মো. মাহিম, মো. সৈকত, তানভীর হাসান হৃদয় ও মো. ইমন।
চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তোফায়েল আহমেদ যাত্রীদের নামগুলো নিশ্চিত করেছেন।
দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা লোকজন জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলা আন্তনগর ট্রেন মহানগর প্রভাতীর যাত্রাকালে মাইক্রোবাসটি দ্রুতগতিতে রেললাইন অতিক্রম করার চেষ্টা করে। লাইনে ওঠার পর ট্রেনের ধাক্কায় সেটি দুমড়েমুচড়ে যায়।
মীরসরাই থানার উপপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতীর ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত কয়েকজনকে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জনের অবস্থা মুমূর্ষু।’
সীতাকুণ্ড রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম বলেন, ‘বড়তাকিয়া স্টেশন থেকে ধাক্কা দিয়ে মাইক্রোবাসটিকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে গেছে ট্রেনটি। গাড়িতে অন্তত ১৭ জন ছিলেন।’