রায়পুরায় এক প্রবাসীর স্ত্রীকে (৩০) ধর্ষণের পর পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রায়পুরা উপজেলার উত্তরবাখর নগর ইউনিয়নের লোচনপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আজ রোববার এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ভুক্তভোগী ওই নারী বর্তমানে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও ভুক্তভোগীর স্বজনরা জানান, রায়পুরার বাঁশগাড়ী ইউনিয়নের সোবানপুর গ্রামের ওই তরুণীর সঙ্গে মরজাল এলাকার এক প্রবাসীর বিয়ে হয়। তাদের ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে রয়েছে। শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ও সন্তানের ওপর কারণে-অকারণে নির্যাতন চালাত। বছর খানেক আগে দেবর আলী হোসেন তার মেয়ের পায়ে দা দিয়ে কোপ দেন।
নাতনির পায়ে কোপ দেওয়ার ঘটনায় ধর্ষণের শিকার নারীর বাবা থানায় একটি মামলাও করেছিলেন। এরপর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন মামলা তুলে নিতে তার ওপর চাপ দিতে থাকেন। এতে রাজি না হওয়ায় তারা নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। এরপর বাবার বাড়ি চলে আসেন ভুক্তভোগী। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার টিকা দেওয়ার কথা বলে তাকে ডেকে নিয়ে আসেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
তারা আরও জানান, গতকাল বিকেলে দেবর আলী হোসেন, ননদের ছেলে শাহরিয়ার, ননদ তাসলিমা বেগম ও জা রহিমা বেগমের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি থেকে সিএনজি যোগে টিকা দেওয়ার উদ্দেশে বের হন ওই নারী। সিএনজিতে ওঠার কিছুক্ষণ পর তার চোখ-মুখ বেঁধে ফেলেন তারা। রাতে নির্জন স্থানে নিয়ে সিএনজি থেকে নামিয়ে তাকে ধর্ষণ করেন দেবর আলী হোসেন। পরে ফের সিএনজিতে উঠিয়ে এদিক-সেদিক ঘোরাতে থাকেন।
এরপর রায়পুরা-বারৈচা সড়কের পাশে লোচনপুর এলাকার একটি বাঁশঝাড়ের পাশে নিয়ে যান। সেখানে তরল জাতীয় কিছু শরীরে ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন আলী হোসেন। গৃহবধূর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাত ৩টার দিকে তাকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
রায়পুরা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সাইদ মো. ফারুক বলেন, ওই নারীকে রাত ১০টার দিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। তার শরীরের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গে যা যা ঘটেছে, তা হাসপাতালে আসা পুলিশের কাছে বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।
ভুক্তভোগীর শাশুড়ি বলেন, ‘তার (ভুক্তভোগী নারীর) সঙ্গে আমার ছেলের অনেক আগেই ডিভোর্স হয়ে গেছে। এমন ঘটনা কীভাবে ঘটল, কিছুই জানি না। আমার ছেলে ও নাতিকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।’
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম মোস্তফা বলেন, ঘটনায় অভিযুক্ত আলী হোসেন ও ননদের ছেলে শাহরিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত চলছে।