আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করতে বিএনপির ইন্ধনে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হচ্ছে। রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু জেলে পল্লীতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা তার একটি উদাহরণ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে বিএনপি এমন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকে বাঁচাতে হলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে পরাজিত করতে হবে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
সোমবার রাজধানীর বনানী কবরস্থানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন ও ‘শহীদ শেখ রাসেল দিবস’ উপলক্ষে তার কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘পীরগঞ্জের একটি জেলেপাড়ায় আগুন দেওয়া হয়েছে, মন্দিরে হামলা হয়েছে। সেখানে গবাদি পশু পর্যন্ত প্রাণে রক্ষা পায়নি। সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এ রকম নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। আগুন দিয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। সেই অপপ্রচার থেকেই রংপুরের ঘটনা উদ্ভব। কাজেই সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।’
রংপুরের জেলেপল্লীতে হামলাসহ সব সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় খোঁজ-খবর রাখছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রোববার রাত থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের জেলেপল্লীতে হামলার বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। সেখানকার প্রশাসন ও দলের নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় পর্যায়েও নেতাকর্মীদের সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গত ১২ বছরে দুর্গাপূজার সময় মণ্ডপে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। অথচ এবার পরিকল্পিতভাবে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় সারাদেশে তাণ্ডব চালিয়েছে। পঁচাত্তর সাল থেকে এই দেশে হত্যা, ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির যে ধারা চলছে, তার উত্তরাধিকার এখনও বয়ে চলেছে বিএনপি। এই হত্যা, ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কারণে বহু কষ্টে অর্জিত দেশের গণতন্ত্র বারবার ব্যাহত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অর্জন এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিষবৃক্ষ যে ডালপালা গজিয়েছে, সেই বিষবৃক্ষের ডালপালাসহ সবকিছু উপড়ে ফেলাই হোক শেখ রাসেলের জন্মদিনের শপথ।’
‘সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে মন্দিরে হামলা করছে’- বিএনপি নেতাদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি তো তাদের নেতাকর্মীদের মন্দিরের নিরাপত্তা ও পাহারা দেওয়ার জন্য বলেছে। কোথায় তারা পাহারা দিয়েছে? ওদের পাহারা দিতে দেওয়া মানে হলো শিয়ালের কাছে মুরগি বর্গা দেওয়া।’
সম্প্রতি বাহাত্তরের সংবিধানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ার কারণে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে দলগতভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে কেউ যদি কিছু বলে থাকেন, সেটা নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। দলের অভ্যন্তরে থেকে কেউ যদি দলের আদর্শবিরোধী বক্তব্য দেন, আচরণ করেন- তাহলে অবশ্যই তিনি শাস্তিযোগ্য হবেন।’
এর আগে ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও শেখ রাসেলসহ ১৫ আগষ্টের শহীদদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পরে দলীয় নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। পরে বনানী কবরস্থান মসজিদে দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ,আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজ্জামেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর প্রমুখ।