1. meghnaonline24@gmail.com : দৈনিক মেঘনা :
রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪৫ পূর্বাহ্ন

বিস্তারিত জানতে এসএমএস/ফোন করুন 👇

ভয়াবহ বন্যায় মানুষের হাহাকার, ত্রাণ ও সুপেয় পানির সংকট

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : রবিবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৪
  • ৫০ ০০০

কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে থাকা কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার মধ্যে ১৪টি উপজেলাই বানের পানিতে নিমজ্জিত। পানিবন্দি অন্তত ১৫ লাখ মানুষ। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।চারদিকে এখন বানভাসী মানুষের হাহাকার। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে ত্রাণ ও সুপেয় পানির সংকট।

কুমিল্লায় আকস্মিক বন্যার আঘাতে সর্বপ্রথম প্লাবিত হয় জেলার চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও লাকসাম উপজেলা। এরপর ধীরে ধীরে অন্যান্য উপজেলা প্লাবিত হয়।
গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাতে গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় বুড়িচংসহ অন্যান্য উপজেলা। জেলার অন্যান্য উপজেলায় কমবেশি ত্রাণ পৌঁছালেও সেভাবে খাদ্য সহায়তা পৌঁছায়নি জেলার মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোটে। অথচ পানির নিচে থাকা এ দুই উপজেলায় ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন বানভাসী মানুষ।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে শুরু করে কয়েকটি স্থানে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও এগুলো চাহিদার সিকিভাগ পূরণ করতে পারছে না।যার কারণে এ দুই উপজেলার বানভাসী মানুষেরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মনোহরগঞ্জ উপজেলার গাজিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আবদুল বাকী মিলন বলেন, বুড়িচংসহ অন্যান্য উপজেলার আগে মনোহরগঞ্জ উপজেলা পুরোপুরি প্লাবিত হয়। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে আলোচনায় আসেনি। আমাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে সরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। খাবারের কষ্টে মানুষ হাহাকার করছেন।
দোকানপাটেও তেমন খাবার সামগ্রী নেই। থাকলেও দাম অনেক বেশি নেওয়া হচ্ছে। ১৪/১৫ শ টাকার গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায়। সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এসব বিষয়ে তদারকিসহ এ উপজেলাকে দ্রুত দুর্গত এলাকা ঘোষণা করে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া দরকার ।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে মানুষজন কুমিল্লায় এলেও ত্রাণ ও উদ্ধার কর্মীরা বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম, দাউদকান্দি, লাকসাম এসব এলাকায় বেশি প্রবেশ করছেন। স্থানীয় সামান্য কিছু উদ্যোগ ছাড়া ত্রাণ পাচ্ছেন না নাঙ্গলকোট ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার লাখ লাখ পানিবন্দি মানুষ।আজ রবিবার (২৫ আগস্ট) সকালে এ দুই উপজেলার অন্তত ১০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রচার-প্রচারণা কম থাকায় ব্যক্তি ও সংগঠন কেন্দ্রীক ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ করা বাইরের স্বেচ্ছাসেবকরা একদম আসছেন না এ দুই উপজেলায়। মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট উপজেলা একেবারেই নোয়াখালীর পাশে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যারাই ত্রাণ সহায়তা নিয়ে কুমিল্লায় আসছেন, তাদের সবাই কাছাকাছি অঞ্চল বুড়িচং, চৌদ্দগ্রাম বা আশপাশের উপজেলাগুলোতে প্রবেশ করছেন। মহাসড়ক থেকে দূরের উপজেলা হওয়ায় সেখানের এ উপজেলাগুলোতে বানভাসীদের কাছে যাচ্ছেন না কেউই। যার কারণে এ উপজেলাগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষের মধ্যে হাহাকার বেড়েই চলেছে।

লাঙ্গলকোটের বাসিন্দা আজিম উল্যাহ হানিফ বলেন, নাঙ্গলকোটের সাতবাড়িয়া গত কয়েক দিন ধরে পানির নিচে। এলাকাটা অনেক ভেতরে হওয়ায় কেউই সেখানে যাচ্ছেন না। যার কারণে তাদের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থা পুরো উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে। সংবাদ মাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা কম থাকায় ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এসব এলাকার বানভাসী মানুষজন।

স্থানীয়রা জানান, গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলার প্লাবনের খবর বেশি প্রচার হওয়ায় সারাদেশ থেকে দলে দলে নৌকা ও ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করছেন সেখানেই। কিন্তু এর আগেই ডাকাতিয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে জেলার দক্ষিণের চারটি উপজেলা। এসব এলাকায় অন্তত ৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি আছেন। সরকারি ত্রাণ সেসব মানুষদের জন্য খুবই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন সেসব এলাকার বানভাসীরা।

উপজেলার ঢালুয়ার বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুরো নাঙ্গলকোটে শুধু পানি আর পানি। অনেক অসুস্থ মানুষ, বৃদ্ধ মানুষ, গর্ভবতী নারীও আটকে আছে। তাদের উদ্ধার করা খুব দরকার, পাশাপাশি ত্রাণ সহায়তাও। দেশের বিত্তশালী মানুষদের এদিকটার প্রতি একটু মনযোগ দেওয়ারও অনুরোধ করব।

মনোহরগঞ্জ উপজেলার এক মাদরাসা শিক্ষক বলেন, বলেন, পুরো উপজেলার প্রায় সব সড়ক পানির নিচে। পুকুর দিঘি থেকে শুরু করে মাছের ঘের সবকিছুই প্লাবিত হয়েছে। মানুষের দুর্ভোগ এখন অবর্ণনীয়।

মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজালা রানী চাকমা বলেন, এই উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত অবনতির দিকে যাচ্ছে। আজও পানি কিছুটা বেড়েছে। মনোহরগঞ্জ উপজেলার অনেক দুর্গম এলাকা রয়েছে যেগুলোতে নৌকা ছাড়া যাওয়া একেবারেই অসম্ভব। আমাদের কাছে নৌকার প্রচুর সংকট রয়েছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে পাঠিয়ে সেসব এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যেন একটা মানুষও অভুক্ত না থাকে। তবে আমাদের আরও অনেক সহায়তা দরকার। আমি অনুরোধ করবো বিত্তশালীরা বানভাসী মানুষের জন্য এগিয়ে আসুন।

নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, নাঙ্গলকোটে ত্রাণ সরবরাহে কিছুটা সংকট আছে আমরা সেটা স্বীকার করছি। এ উপজেলার কিছু জায়গায় একেবারেই পৌঁছানো যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি ।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

বিস্তারিত জানতে এসএমএস/ফোন করুন 👇

বিস্তারিত জানতে ছবিতে 👇 ক্লিক করে–ফেসবুকে এসএমএস করুন 👇

© All rights reserved © 2021
Theme Customized BY IT Rony