1. meghnaonline24@gmail.com : দৈনিক মেঘনা :
সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১২ অপরাহ্ন

বিস্তারিত জানতে এসএমএস/ফোন করুন 👇

রেড ক্রিসেন্টের ৮ সদস্যসহ ১৫ সহায়তাকর্মীকে হত্যা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিন্দা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • Update Time : শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫
  • ১৩ ০০০

২৩ মার্চ ইসরায়েলি বাহিনীর এক হামলায় ১৫ জন মানবিক সহায়তা কর্মী নিহত হন। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা কোনো অ্যাম্বুল্যান্সে ‘এলোপাতাড়ি হামলা’ চালায়নি; বরং ‘সন্দেহজনক যানবাহনে’ আসা ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করেই গুলি চালানো হয়।ওই ঘটনায় এখনো এক প্যারামেডিক নিখোঁজ রয়েছেন।

গাজায় নিহত এক সহায়তাকর্মীর মোবাইল থেকে উদ্ধার করা একটি ভিডিওতে তাদের শেষ মুহূর্তের চিত্র দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস)। ভিডিওতে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত অ্যাম্বুল্যান্স ও জ্বলজ্বল করা জরুরি আলোর মধ্যে তীব্র গুলির শব্দ শোনা যায়। 
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শোশানি জানান, যে গাড়িগুলোর ওপর গুলি চালানো হয়েছে, সেগুলোর জন্য আগে থেকে অনুমোদন ছিল না এবং সেগুলোর আলোও বন্ধ ছিল। অন্যদিকে পিআরসিএস শনিবার যে ভিডিও প্রকাশ করেছে, তা সেনাবাহিনীর এসব দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ভিডিওতে দেখা যায়, হেডলাইট ও জরুরি বাতি চালু অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সগুলো চলছিল।

 সম্ভবত একটি চলমান গাড়ি থেকে ধারণ করা ওই ভিডিওতে আরো দেখা যায়, একটি লাল ফায়ার ট্রাক ও একাধিক অ্যাম্বুল্যান্স রাতে চলাচল করছে। এগুলো রাস্তায় থেমে একটি অন্য গাড়ির পাশে দাঁড়ালে দুজন ইউনিফর্মধারী ব্যক্তি গাড়ি থেকে নামেন। এর পরই তীব্র গুলির শব্দ শোনা যায়।ভিডিওতে দুইজন চিকিৎসাকর্মীর কণ্ঠও শোনা যায়।

একজন বলেন, ‘গাড়িটা, গাড়িটা’, অন্যজন উত্তর দেন, ‘মনে হয় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ এর কয়েক সেকেন্ড পরই তীব্র গুলির শব্দ শুরু হয় এবং স্ক্রিন কালো হয়ে যায়।পিআরসিএস জানায়, নিহত সহায়তাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোন থেকে এই ভিডিওটি উদ্ধার করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘এই ভিডিও নির্ভেজালভাবে প্রমাণ করে, অ্যাম্বুল্যান্সে ইসরায়েলি বাহিনীর এলোপাতাড়ি হামলা না চালানোর দাবি মিথ্যা। কিছু গাড়ি আলো বা জরুরি চিহ্ন ছাড়া এগিয়ে এসেছিল—সেই কথাও অসত্য।নিহতদের মধ্যে ছিলেন পিআরসিএসের আট কর্মী, গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার ছয় সদস্য ও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর এক কর্মী। তাদের মরদেহ রাফার কাছে একটি গণকবরে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ)। অন্যদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, মরদেহগুলো ‘বালু ও কাপড়ে ঢাকা ছিল, যাতে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়’ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের পর সেগুলো উদ্ধার করা যায়। এই হামলার তদন্ত চলছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।

ভয় ও প্রার্থনায় শেষ মুহূর্ত
ওসিএইচএ জানিয়েছে, ওই দিন ভোরে প্রথম দলটিকে ইসরায়েলি বাহিনী লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এরপর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সহকর্মীদের খোঁজে এগিয়ে যাওয়া আরো কয়েকটি উদ্ধার ও সহায়তা দলের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালানো হয়।

পিআরসিএস বলেছে, রাফায় গোলাবর্ষণের মধ্যে আটকে পড়া বেসামরিক লোকদের ডাকে সাড়া দিয়েই এই বহরটি পাঠানো হয়েছিল।

ভিডিওতে যে চিকিৎসাকর্মী দৃশ্য ধারণ করছিলেন, তাকে বারবার কালেমা শাহাদাত পাঠ করতে শোনা যায়—‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসূল’—কম্পিত কণ্ঠে তিনি এটি বারবার উচ্চারণ করেন, গুলির শব্দের মধ্যে। তাকে আরো বলতে শোনা যায়, ‘মা, ক্ষমা করো, কারণ আমি এই পথ বেছে নিয়েছি—মানুষের সেবা করার পথ।’ এরপর তিনি বলেন, ‘আমার শাহাদাত (মৃত্যু) কবুল করো হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো।’

ভিডিও শেষ হওয়ার আগে ইসরায়েলি সেনাদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘ইহুদিরা আসছে, ইহুদিরা আসছে।’

এই হামলায় সহায়তাকর্মীদের মৃত্যুর ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। ফিলিস্তিন অঞ্চলে ওসিএইচএর প্রধান জোনাথন হুইটল বলেন, নিহতদের মরদেহ ‘ইউনিফর্ম ও হাতে গ্লাভস পরা’ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক এ হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, এতে ইসরায়েলি বাহিনীর ‘যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের সম্ভাবনা’ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমি ১৫ জন চিকিৎসা ও সহায়তাকর্মীর হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত। এতে ইসরায়েলি সেনাদের যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে উঠছে।’ এ ছাড়া তুর্ক একটি ‘স্বাধীন, দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ তদন্তের’ আহ্বান জানান।

‘আমাদের সব কর্মীই সাধারণ নাগরিক’
এদিকে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্যারামেডিক মুনথের আবেদ বলেন, ‘দিনে হোক বা রাতে—সব সময়ই একইভাবে গাড়ির বাইরের ও ভেতরের আলো জ্বলে। গাড়ির গায়ে স্পষ্ট করে লেখা থাকে যে এটি ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্টের অ্যাম্বুল্যান্স। গাড়ির সব আলো জ্বলছিল, যতক্ষণ না তা সরাসরি গুলির শিকার হয়।’

তিনি ও তার দলের সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আবেদ বলেন, ‘আমাদের সব কর্মীই সাধারণ নাগরিক। আমরা কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য নই। আমাদের একমাত্র কাজ অ্যাম্বুল্যান্স সেবা দেওয়া ও মানুষের জীবন রক্ষা করা—এর বাইরে কিছু নয়।’

এ ছাড়া জাতিসংঘে গতকাল দেওয়া এক ভাষণে পিআরসিএস প্রেসিডেন্ট ড. ইউনিস আল-খাতিব সেই ভিডিওর প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “আমি নিহত হওয়া এক সহকর্মীর কণ্ঠস্বর শুনেছি। গুলি খাওয়ার ঠিক আগেই তার শেষ কথা ছিল…‘আমাকে মাফ করে দিও মা, আমি শুধু মানুষকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। আমি জীবন বাঁচাতে চেয়েছিলাম।’ এটি হৃদয়বিদারক।” তিনি এ ঘটনাকে ‘নৃশংস অপরাধ’ আখ্যা দিয়ে ‘জবাবদিহি’ ও ‘একটি স্বাধীন ও পূর্ণাঙ্গ তদন্ত’ দাবি করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

বিস্তারিত জানতে এসএমএস/ফোন করুন 👇

বিস্তারিত জানতে ছবিতে 👇 ক্লিক করে–ফেসবুকে এসএমএস করুন 👇

© All rights reserved © 2021
Theme Customized BY IT Rony