শিশুটির পরিবারের দাবি, মাত্র তিন হাজার টাকা বিলের জন্য শিশুসহ তাঁদের আটকে রাখা হয়, তাতে বিনা চিকিৎসায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে।
তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ অভিযোগ অস্বীকার করলেও, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে বলে জানিয়েছে।
আজ রোববার দুপুর ১২টার দিকে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা (গিলন্ড) এলাকায় মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটেছে।
শিশু রেজওয়ান পার্শ্ববর্তী শিবালয় উপজেলার মহাদেবপুর ইউনিয়নের ফলসাটিয়া গ্রামের সোহেল গাজীর ছেলে।
এদিকে কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশুটির মৃত্যুর খবরে স্বজনেরা হাসপাতাল ঘেরাও করেন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্বজনেরা জানান, শনিবার রাত ২টার দিকে শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দেড় বছরের শিশু রেজওয়ানকে মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁরা। সেখানে শিশুটির অবস্থার অবনতি হতে শুরু করলে আজ (রোববার) সকাল ৮টায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শিশু হাসপাতালে রেফার করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইমারজেন্সি মুহূর্তে তিন হাজার টাকা বিলের জন্য রেজওয়ান ও তার স্বজনদের আটকে রাখে। এ অবস্থায় বেলা ১১টার দিকে শিশু রেজওয়ান মারা যায়।
তাঁরা আরও জানান, এ ঘটনা পুলিশকে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
শিশু রেজওয়ানের বাবা সোহেল গাজী বলেন, ‘রেজওয়ানকে ভর্তির পর ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। অবস্থা খারাপ দেখে ৮টার দিকে ঢাকায় রেফার করে দেন এখানকার ডাক্তার।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওই মুহূর্তে রেজওয়ানের মা ও দাদি হাসপাতালে ছিল। তাদের কাছে কোনো টাকা ছিল না। তিন হাজার টাকা বিলের জন্য, তিন ঘণ্টার বেশি আটকে রাখার কারণে রেজওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। আমার বুক খালি করছে, আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’
সোহেল গাজী জানান, তিনি একটি বেসরকারি কোম্পানির সেলসম্যান হিসেবে মানিকগঞ্জেই চাকরি করেন। রাতে সন্তানকে ভর্তি করে বাড়ি ফিরে ভোরের দিকে ঘুমিয়ে পড়েন। হাসপাতাল থেকে সকালে স্বজনেরা তাঁর মোবাইল নম্বরে কল দিলেও তিনি বুঝতে পারেননি। পরে বাড়ি থেকে রান্না করে খাবার নিয়ে হাসপাতালে গিয়ে এ ঘটনা জানতে পারেন।
এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুন্নু মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ‘গত রাত ২টার দিকে রেজওয়ান নামের শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শিশুটির তীব্র মাত্রায় নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। এ অবস্থায় শিশুটির স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ায় ঢাকায় রেফার করা হয়েছিল। তার স্বজনেরা তাকে নিতে দেরি করায় শিশুটির মৃত হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘তবে স্বজনদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জুনিয়র অ্যাডমিন অফিসার ইফাজ আহাম্মদকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করেছে। সেই সঙ্গে ঘটনার তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’ তদন্তের পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
এ বিষয়ে ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শিশুটির মৃত্যু হয়েছে বলে মৌখিক অভিযোগ করেছে তার স্বজনেরা। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’