কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার সুবর্ণপুর এলাকায় পল্লী চিকিৎসক বিল্লাল হোসেন ও তার স্ত্রী সফুরা বেগমকে হত্যার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে তাদের হত্যা করেন পুত্রবধূ শিউলি। ঘটনাটি ডাকাতি বলে চালিয়ে দিতে শিউলিকে হাত-পা বেঁধে চলে যান তার প্রেমিক ও আরেক সহযোগী।
আজ মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তথ্য জানান কুমিল্লার পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ। তিনি জানান, পুত্রবধূ শিউলির পরিকল্পনায় গত রোববার কিলিং মিশনে অংশ নেন তার পরকীয়া প্রেমিকসহ তিনজন। প্রথমে নামাজরত অবস্থায় শাশুড়ি সফুরা বেগমের হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়। পরে ঘাতকরা অপেক্ষা করেন শ্বশুর পল্লী চিকিৎসক বিল্লাল হোসেনের জন্য। বিল্লাল হোসেন বাসায় ফিরলেই তারও হাত-পা বেঁধে একই কায়দায় হত্যা করা হয়। ঘটনাটিকে ডাকাতি বলে চালাতে পুত্রবধূ তার হাত-পা বেঁধে অন্যদের চলে যেতে বলেন। পরে তিনি ‘ডাকাত ডাকাত’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
হত্যাকাণ্ডের এই পরিকল্পনা দীর্ঘদিন থেকে করে আসছিলেন নিহত বিল্লাল হোসেনের বড় ছেলে প্রবাসী সৈয়দ আমানুল্লাহর স্ত্রী শিউলি। পুলিশ জানায়, কিলিং মিশন সম্পন্ন করতে পরকীয়া প্রেমিক খালাতো ভাই জহিরুল ইসলাম ওরফে সানি ও তার বন্ধু মেহেদী হাসান তুহিনের সঙ্গে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় দফায় দফায় বৈঠক করেন শিউলি।
পরে গত রোববার রাত ৮টার দিকে শিউলি কয়েকজন বন্ধু নিয়ে তার প্রেমিককে বাসায় আসতে বলেন। রাত ৯টার দিকে সানি তার বন্ধু তুহিনকে নিয়ে শিউলির শ্বশুরবাড়িতে যান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘরের দরজা খুলে তাদের প্রবেশ করান শিউলি।
সানি ও তুহিন ঘরে প্রবেশের কিছুক্ষণ পরই শিউলি তার পরনের ওড়না দিয়ে নামাজরত শাশুড়ির মুখ চেপে ধরেন। অন্য দুইজন হাত-পা বেঁধে ফেলেন। শাশুড়ি সফুরা বেগমকে বিছানায় ফেলে কম্বল দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন শিউলি।
পরে শ্বশুর বিল্লাল হোসেন বাসায় ফিরলে একই কায়দায় তাকেও হত্যা করেন অভিযুক্তরা। হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ঘরের আসবাবপত্র কাপড়-চোপড় মেঝেতে ফেলে রাখা হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সানি ও তুহিন শিউলিকে হাত-পা বেঁধে পালিয়ে যান। এরপর শিউলি ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। তারা বিল্লাল ও তার স্ত্রী সফুরার লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেন।
স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিউলিকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার রহস্য খুঁজে পাওয়া যায়। পুলিশ জহিরুল ইসলাম সানিকে নগরীর চর্থা এবং তুহিনকে জেলার বরুড়া থেকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যার ঘটনা স্বীকার করেন।
এর আগে নিহতদের মেয়ে সৈয়দা বিলকিস আক্তার বাদী হয়ে তার ভাবি শিউলী আক্তারকে আসামি করে অজ্ঞাতনামা ২-৩ জনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেন। শিউলির প্রেমিক জহিরুল ইসলাম সানি (১৯) নগরীর চর্থা এলাকার আব্দুর রহিম মজুমদারের ছেলে এবং মেহেদী হাসান তুহিন (১৮) জেলার লালমাই উপজেলার দক্ষিণ জয়কমতা গ্রামের শাহাবুদ্দিনের ছেলে।