প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি-সম্পাদক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সাত দিনের রিমান্ড চলাকালে গতকাল বুধবার আসামিরা স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দেন।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদীর আদালত আসামি সংগঠনের সভাপতি কামরুজ্জামানের এবং আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলামের আদালত সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) কাজী শরীফুল ইসলাম আসামিদের স্বীকারোক্তি গ্রহণের আবেদন করে আদালতে হাজির করেন।
আজ বৃহস্পতিবার মিরপুর মডেল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন বিষয়টি জানান।
এর আগে, গত ৫ জুলাই গ্রেপ্তার হওয়া এ আসামিদের গত ৬ জুলাই সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলা থেকে জানা যায়, গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ এবং আইনজীবী ও টেলিকম সিবিএ নেতার যোগসাজশে তড়িঘড়ি করে শতাধিক মামলা থেকে গ্রামীণ টেলিকমকে ইনডেমনিটি দেওয়ার জন্য বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের দুইজন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নগদ ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী এবং টেলিকম ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান মিরপুর মডেল থানায় এ সংক্রান্তে একটি মামলা দায়ের করেন।
বাদী অভিযোগে উল্লেখ করেন, গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানিতে বিভিন্ন সময়ে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ক্রমাগত নবায়ন করে। শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ (৮০:১০:১০) অনুপাতে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড (ডব্লিউপিপিএফ), শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন বরাবর দেওয়ার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির ‘কর্মচারীরা স্থায়ী নয়’ এবং ‘কোম্পানি অলাভজনক’ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কথা বলে শ্রমিকদের আইনানুগ লভ্যাংশ দেওয়া থেকে বিরত থাকে। বিভিন্ন আইনানুগ দাবি-দাওয়ার কারণে ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর একযোগে বেআইনিভাবে ৯৯ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের স্থায়ীকরণ ও লভ্যাংশ পাওনা, বেআইনিভাবে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের পরে কোম্পানিতে পুনর্বহাল, কোর্টের আদেশ অনুযায়ী পুনর্বহালের পরেও দায়িত্ব না দিলে কনটেম্পট অব কোর্ট (আদালত অবমাননা), কোম্পানির অবসায়ন দাবিসহ অন্য দাবিতে শ্রমিকরা এবং শ্রমিক ইউনিয়ন গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় শ্রম আদালত এবং হাইকোর্টে প্রায় ১৯০টি মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করেন। তড়িঘড়ি করে অনেকটা গোপনে এ সব মামলা উত্তোলন, শ্রমিকদের অর্থ দেওয়া এবং প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা লক্ষ্য করা যায়।