টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর গ্রেপ্তারকৃত আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে স্ত্রী হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোর্শেদের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবা সৈয়দ শরিফ উদ্দিন (৫৬) বাদী হয়ে নয়জনের নাম উল্লেখ মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন—আতিকুর রহমান মোশেদ (৫২), মুন্সী তারেক পটন (৪৯), পারভেজ খান রনি (৩৬), সোহেল ওরফে বাবু (২৭), দুলাল সূত্রধরের ছেলে অন্তর সূত্রধর (২৭), আতিকুর রহমান মোর্শেদের প্রথম স্ত্রী সুমা (৪৫), মুন্সী তারেক পটনের স্ত্রী লিনা (৪০), শামীম আল মামুনের ছেলে রাফসান (২৮) ও আয়নাল মিয়া (৪৫)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিলর মোর্শেদের বাসার সামনে সৈয়দ শরিফ উদ্দিন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসা ভাড়া থাকতেন। সেখান থেকে ২০১২ সালের জুন মাসে তার মেয়ে পিংকিকে মোর্শেদের লোকজন অপহরণ করে। পরে ১৭ নং ওয়ার্ডের কাজী মোস্তফার মাধ্যমে মোর্শেদ ও সৈয়দ আমেনা পিংকির বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর জোর করে কাজী মোস্তফার বালাম বই থেকে মোর্শেদ তাদের কাবিন নামা ছিড়ে ফেলে দেয়। তাদের সংসারে ছয় বছরের এক মেয়েও রয়েছে।
দুই স্ত্রী থাকায় মোর্শেদের পরিবারের মাঝে মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি হয়। ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি রাতে মুন্সী তারেক পটনের বাসায় দাওয়াতের কথা বলে পিংকিকে নিয়ে যায় মোর্শেদ। সেখানে নিয়েই অভিযুক্ত আসামিরা পিংকিকে হত্যা করে লাশ গুম করে।
সৈয়দ শরিফ উদ্দিন বলেন, ‘আমার মেয়ে পিংকিকে মোর্শেদ জোর করে বিয়ে করে। এরপর মোর্শেদসহ তার বাহিনীর লোকজন আমার মেয়েকে হত্যা করে। মোর্শেদসহ তার ক্যাডার বাহিনীর ফাঁসির দাবি করছি।’
এ বিষয়ে ১৭নং ওয়ার্ডের কাজী মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয় সূত্র জানায়, মোর্শেদ টাঙ্গাইল শহর ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। পরে জেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে দলীয় পদ না থাকলেও শহর আওয়ামী লীগের দলীয় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন।
প্রসঙ্গত, টাঙ্গাইল পৌরসভার ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আতিকুর রহমান মোর্শেদকে গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) গোয়েন্দা পুলিশ ও সদর থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে পৌরসভার সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে তার বিশ্বাস বেতকা এলাকার বাড়িতে তল্লাশী চালিয়ে দুইটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগজিন উদ্ধার করে পুলিশ। শুক্রবার (২০ আগস্ট) আগস্ট জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোর্শেদকে তিন দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। গতকাল সোমবার তিন দিনের রিমান্ড শেষে মোর্শেদকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন জানান, রিমান্ডে মোর্শেদ জিজ্ঞাসাবাদে তার ওই অস্ত্র এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। তার দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল সদর থানা সূত্র জানায়, আতিকুর রহমান মোর্শেদের বিরুদ্ধে দুই যুবলীগ নেতা হত্যা, ছাত্রদল নেতা রেজা হত্যা, ব্যবসায়ী তুহিন হত্যা মামলাসহ চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের এক ডজন মামলা হয়েছে।