1. meghnaonline24@gmail.com : দৈনিক মেঘনা :
শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৪১ পূর্বাহ্ন

বিস্তারিত জানতে এসএমএস/ফোন করুন 👇

২০-দলীয় জোটে অস্থিরতা

রির্পোটারের নাম:
  • Update Time : শুক্রবার, ৮ অক্টোবর, ২০২১
  • ১৮৮ ০০০

নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই বিএনপি জোটে অস্থিরতা তৈরি হয়। গত নির্বাচনের আগে এক দফা ভাঙনের মুখে পড়ে ২০ দল। এবার নির্বাচনের দুই বছর আগেই অস্থিরতা শুরু হয়েছে, জোট ছেড়েছে আরও একটি দল। বিএনপি নেতারা বলছেন, শরিকদের জোট ছাড়ার পেছনে বিএনপির নিষ্ক্রিয়তা বা অবহেলা মূল কারণ নয়, এর পেছনে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক শক্তি কাজ করছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপকালে জোট ছেড়ে যাওয়া দলগুলোর কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, বিএনপির ওপর নানা কারণে তারা বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হলেও সরকারের চাপেই জোট ছেড়েছেন। কেউ কেউ বলছেন, শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব ব্যক্তিগতভাবে সুবিধাভোগী জোটকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।

গত ১ অক্টোবর বিএনপি জোটে থাকা সর্বশেষ নিবন্ধিত ইসলামি রাজনৈতিক দল খেলাফত মজলিশ জোট ছেড়েছে। এর আগে জোট ছাড়ে ১৪ জুলাই কওমি আলেমদের পুরনো দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামী বাংলাদেশও। এর বাইরে যে কয়টি ধর্মভিত্তিক দল আছে তারা মূলত এর আগে জোট ছেড়ে যাওয়া দলগুলোর খ-িত অংশ।

বিএনপির কাছে খবর আছে, তাদের জোট ভাঙতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে সরকার। জোট শরিক দলগুলোকে ভাগিয়ে নিতে চাপে রাখা হয়েছে। শরিক দলের নেতারাও স্বীকার করেছেন, রাজনৈতিকভাবে চাপে আছেন তারা। কারণ ইসলামপন্থিদের দিয়ে একটি জোট তৈরি করতে কাজ চলছে। এ জন্যই ধর্মভিত্তিক দলগুলো একে একে বিএনপি ছাড়তে শুরু করেছে। আগামী বছরে এই জোট আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামী ছাড়া বাকি দলগুলোকে ২০-দলীয় জোট থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেষ্টা চলছে। এ প্রক্রিয়া সফল হলে বিএনপি ও জামায়াত ছাড়া অন্য কোনো দল ওই জোটে থাকবে না। খ-িত অংশ নিয়ে জোট টিকিয়ে রাখা হলেও তাতে সুবিধা পাবে না বিএনপি। এর মাধ্যমে জনগণ এবং আন্তর্জাতিক মহলকে বোঝানো যাবে- যুদ্ধাপরাধের দল জামায়াত ছাড়া বিএনপির সঙ্গে কেউ নেই।

তবে বিএনপি নেতারা বলছেন, এ ধরনের প্রক্রিয়া আগেও ছিল, কিন্তু তা সফল হয়নি। এবারও একই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শরিক দলগুলোর নেতারাও তাদের সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছেন। তবে বিএনপি কাউকে ছাড়বে না, কাউকে ছেড়ে যেতে বলবেও না।

জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাদের সময়কে বলেন, সরকারের চাপে জোট ছেড়েছে খেলাফত মজলিশ। বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করতে সরকারের অপচেষ্টার অংশ এটি। এভাবে সরকার আগেও সফল হয়নি, এবারও হবে না। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে এর প্রমাণ মিলবে।

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, চাপে ফেলে বিএনপি জোট থেকে শরিকদের বিচ্ছিন্ন করা হলেও এসব দলের কর্মী, সমর্থক ও ভোটাররা তাদের সঙ্গেই আছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষকে ভোট দেবে তারা।

বিএনপি নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন গঠন, নির্দলীয় সরকার নিয়ে তাদের অবস্থান, আগামী নির্বাচন এবং সরকারের গেলে কী করবে তার একটি রূপরেখা জাতির সামনে তুলে ধরে কর্মসূচি দেবে। ওই কর্মসূচির সঙ্গে যারা একাত্মতা প্রকাশ করে মাঠে থাকবে, তাদের নিয়েই চলবে বিএনপি। কর্মসূচিগুলো বিএনপি এককভাবে পালন করবে, তবে ২০ দল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কিংবা সরকারবিরোধী যে কোনো রাজনৈতিক দল যুগপৎভাবে এ আন্দোলনে অংশ নিলে তাদের স্বাগত জানাবে বিএনপি।

২০ দলের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বিএনপি ২০ দলের প্রধান। তাদের নেতৃত্বে আমরা জোটে অংশ নিয়েছি। জোটের নেতৃত্বকারী দল হিসেবে তারা যখন যে কর্মসূচি দেবে, তার সঙ্গে আমরা থাকব।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের ৬ মে জোটের সঙ্গ ত্যাগ করে ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি)। দলটি ছিল নিবন্ধিত। এর আগে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে ২০-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যায় শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি)। ওই সময় এনপিপির একটি অংশ জোটে থেকে যায়। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে জোট ছেড়ে যায় প্রয়াত মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট। ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ ও খন্দকার গোলাম মোর্তুজার নেতৃত্বাধীন এনডিপি জোট থেকে বেরিয়ে যায়। বাংলাদেশ ন্যাপও নিবন্ধিত। ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর জোট ছাড়ে লেবার পার্টির একটি অংশ। তবে মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি নামে আরেকটি অংশ থেকে যায় ২০-দলীয় জোটে।

অবশ্য ২০ দলের সভাই হয় না দীর্ঘদিন। জোটভুক্ত কর্মসূচিও হয়নি। যার কারণে দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জোট শরিকদের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আনলেও বিএনপির শীর্ষ নেতা তা আমলে নেয়নি।

এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব) ড. অলি আহমদ বলেন, জোটে যেহেতু একে অপরের সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে, অনেকের মধ্যে হতাশা কাজ করছে এবং ভালো ভবিষ্যৎ দেখছে না। তাই কিছু দিন পর পর বৈঠক হলে সবাই যার যার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে পারত এবং সমাধান পেত। তা হলে এ ধরনের হতাশা কাজ করত না, দূরত্ব সৃষ্টি হতো না, কেউ জোট ছেড়েও যেত না।

জোট সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জুলাই মাসে ২০-দলীয় জোটের একটি ভার্চুয়াল সভা হয়েছিল। ওই সভায় জোটের কর্মকা- নিয়ে আলোচনা হয়। দীর্ঘ বিরতির পর চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি জোটের কয়েকটি শরিক দলকে নিয়ে বিএনপি একটি স্মরণসভা করে। এক বছরের বেশি সময় ধরে ২০-দলীয় জোটের আর কোনো কর্মকা- চোখে পড়েনি।

এ বিষয়ে গয়েশ্বরচন্দ্র রায় বলেন, জোটের কার্যক্রম সব সময় সমান থাকে না। ভোট এলে জোটের কর্মসূচি ও কার্যক্রম বাড়তে থাকে। আমরা কিছু দিনের মধ্যে কর্মসূচি দেব, এর সঙ্গে যারা থাকবে তাদের নিয়ে পথ চলব।’

২০-দলীয় জোটের আরেক শরিক বিএনপির সাবেক প্রভাবশালী নেতা কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এলডিপিও জোটে থাকতে চায় কি না, তা নিয়েও রাজনীতি মহলে রয়েছে নানা গুঞ্জন। ২০১৯ সালের জুনের শেষে অলি আহমদের নেতৃত্বে ২০ দলের কয়েকটি শরিক নিয়ে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ নামে আলাদা একটি মোর্চা গড়ে তোলে। তখন বিএনপির সঙ্গে জোটের অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। এলডিপিও এখন ২টি অংশে বিভক্ত। অপর দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছে? বিএনপির সাবেক নেতা আবদুল করিম আব্বাসী ও শাহাদাৎ হোসেন সেলিম। ২টি অংশই ২০-দলীয় জোটে রয়েছে। গত নির্বাচনের আগে জোট যুক্ত হওয়া একটি দলের ব্যাপারেও বিএনপির মধ্যে সন্দেহ আছে।

১৯৯৯ সালের ৬ জানুয়ারি বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা), জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট (আমিনী) নিয়ে চারদলীয় জোট গঠিত হয়। ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল ১৮ দল এবং পরে পর্যায়ক্রমে আরও দুটি দল নিয়ে ২০-দলীয় জোট গঠিত হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

বিস্তারিত জানতে এসএমএস/ফোন করুন 👇

বিস্তারিত জানতে ছবিতে 👇 ক্লিক করে–ফেসবুকে এসএমএস করুন 👇

© All rights reserved © 2021
Theme Customized BY IT Rony