ঢাকার আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি গঠনে কোটি কোটি টাকার পদ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। গঠনতন্ত্র অমান্য করে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে বিএনপির সক্রিয় নেতাদের নতুন কমিটিতে স্থান দেওয়ার প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা।
এ ঘটনায় সাভারের স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা বলছেন, এতে দলের শৃঙ্খলা নষ্টের পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ অপূরণীয় ক্ষতির মধ্যে পড়বে।
স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯ অক্টোবর আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল কাদির দেওয়ানকে ছাড়াই আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ফারুক হাসান তুহিন ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান শাহেদ নতুন ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছেন।
স্থানীয় নেতাদের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করার কথা। কিন্তু দলের গঠনতন্ত্র অমান্য করে একটি ওয়ার্ডে সম্মেলনের আয়োজন করেই ৮টি ওয়ার্ডের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই সম্মেলন থেকে ৮টি ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি ও সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। যাদের অনেকেই এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয় ছিল এবং এদের অধিকাংশের নামে গাড়ি পোড়ানো মামলাসহ বিভিন্ন মামলা চলমান রয়েছে। মূলত পদ বাণিজ্য এবং নানা সুবিধা গ্রহণের উদ্দেশ্যে এসব বিতর্কিত লোকদের কমিটিতে নেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নবগঠিত ইয়ারপুর ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটির ২নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে সোহরাব সরকারকে। তিনি এক সময় শ্রমিক দলের আশুলিয়া থানা কমিটির যুব বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ৩নং ওয়ার্ডে সভাপতি করা হয়েছে ইউনুছ পালোয়ান নামের একজনকে। তিনি এই ওয়ার্ডে এক সময় বিএনপির সহ সভাপতি এন্তাজ পালোয়ানের ছেলে। আর ৯নং ওয়ার্ডে সভাপতি করা হয়েছে ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন মোল্লাকে। এছাড়া অন্যান্য পদেও স্থানীয় বিএনপির সক্রিয় সদস্যদের স্থান দেওয়া হয়েছে।
ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুল কাদির দেওয়ান অভিযোগ করে বলেন, আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ফারুক হাসান তুহিন ও ইয়ারপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিরব রহমান শাহেদের যৌথ সিদ্ধান্তে এসব কমিটি গঠন করেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামত উপেক্ষা করে এ ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমাকে বাদ দিয়েই কমিটি গঠনের সব কার্যক্রম করা হয়েছে।
দলের ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে বিতর্কিত ব্যক্তি ও বিএনপির লোকদের কমিটিতে নেয়ার প্রসঙ্গে আব্দুল কাদির দেওয়ান বলেন, সার্চ কমিটির বিভিন্ন সদস্যদের মাধ্যমে আশুলিয়া আওয়ামী লীগের আহবায়ক ফারুক হাসান তুহিন পদ বাণিজ্য করেন। অর্থের লোভে এমন কমিটি গঠন করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করার স্পষ্ট ষড়যন্ত্র।
ইয়ারপুর ইউনিয়নের স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা সাদেকুর রহমান, সাইফুল ও হাসিবসহ একাধিক কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, দলে অনেক যোগ্য ব্যক্তি থাকার পরও তাদের মূল্যায়ন করা হয়নি। মূলত মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ফারুক হাসান তুহিন এ কমিটিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের স্থান দিয়েছেন। এ কমিটি বিলুপ্ত করা না হলে ভবিষ্যতে দলের শৃঙ্খলা নষ্ট কবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়ারপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান শাহেদ বলেন, ওয়ার্ড কমিটি গঠনের সময় আশুলিয়া থানা কমিটির সিনিয়র নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তাদের নির্দেশেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তিনি পদ বাণিজ্যের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ভুলবশত বিএনপির কোনো নেতার নাম চলে আসলে, তা যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগের আহবায়ক ফারুক হাসান তুহিন বলেন, কমিটি গঠনের দিন আমি এবং সদস্য সচিব সাইফুল ইসলাম উপস্থিত ছিলাম না। তাই আমার বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে টাকার বিনিময়ে বিএনপির লোকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হলে, খোঁজখবর নিয়ে প্রমাণ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, কমিটি গঠনের দিন আহবায়ক উপস্থিত না থাকলেও পরে তাকে আনন্দ মিছিল ও গলায় মালা পরার চিত্র রয়েছে।