টঙ্গী (গাজীপুর)প্রতিনিধি
প্রখ্যাত শ্রমিক নেতা ও গাজীপুর-২ আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপির ৭১তম জন্মদিন আজ মঙ্গলবার। দিবসটি পালন করতে টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
গাজীপুর মহানগরীর হায়দরাবাদে মঙ্গলবার বাদ জোহর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার পরিবারের পক্ষ থেকে কবর জিয়ারত, পুষ্পমাল্য অর্পণ, পবিত্র কুরআন খানি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। । এছাড়া গাজীপুরের বিভিন্নস্থানে পৃথকভাবে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার ১৯৫০ সালের ৯ নভেম্বর গাজীপুরের হায়দরাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার ৩ দিন আগে নিজ গ্রামের বাড়িতে পাক হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তিনি নোয়াগাঁও হাইস্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি শ্রমজীবী মানুষের সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের সঙ্গে যুক্ত হন। তিনি দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, একবার উপজেলা চেয়ারম্যান এবং দুইবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কার্যকরী সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০০৪ সালের ৭ মে টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক সমাবেশে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তিনি।
হত্যাকান্ডের পরদিন নিহতের ভাই মতিউর রহমান টঙ্গী থানায় ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ১০/১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন।তদন্ত শেষে এই মামলায় ওই বছরের ১০ জুলাই ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। একই বছরের ২৮ অক্টোবর ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ৩৪ জন এবং আসামিপক্ষে দুজন সাক্ষ্য দেন।এ মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল রায় ঘোষণা করেন।ওই রায়ে বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ আসামিকে মৃত্যুদন্ড এবং ছয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেওয়া হয়। খালাস পান দুজন।
নিম্ন আদালতের রায়ের পর ২২ আসামির ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদন্ড অনুমোদন) শুনানির জন্য ২০০৫ সালে হাই কোর্টে আসে। তাদের মধ্যে ১৪ জন দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন।মৃত্যুদন্ডের বিরুদ্ধে আসামি শহীদুল ইসলাম শিপু ও লোকমান হোসেন হাই কোর্টে পৃথক ফৌজদারি বিবিধ আবেদন করেন, শুধু জেল আপিল করেন মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি কানা হাফিজ।যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া পলাতক এক আসামি আত্মসমর্পণ না করায় আপিলের সুযোগ পাননি।
প্রধান বিচারপতি বিষয়গুলো শুনানির জন্য বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠালে ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়। ৩৪তম দিনে ৮ জুন শুনানি শেষে আদালত ১৫ জুন রায়ে ৬ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন তারা হচ্ছেন,
নুরুল ইসলাম সরকার, নুরুল ইসলাম দিপু (পলাতক), মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ, সোহাগ ।
৭ জনের সাজা কমে যাবজ্জীবন
মোহাম্মদ আলী, সৈয়দ আহমেদ হোসেন মজনু (পলাতক), আনোয়ার হোসেন ওরফে আনু (পলাতক), রতন মিয়া ওরফে বড় মিয়া, জাহাঙ্গীর (পলাতক), মশিউর রহমান ওরফে মশু (পলাতক), আবু সালাম ওরফে সালাম।
যাবজ্জীবন বহাল
নুরুল আমিন
বিবেচিত হয়নি
পলাতক আসামি অহিদুল ইসলাম টিপু আপিল করেননি। তার যাবজ্জীবন সাজাই বহাল।
নিষ্পত্তি
মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি ছোট রতন ও আল আমিন মারা যাওয়ায় তাদের বিষয়টি নিষ্পত্তি করে দিয়েছে হাই কোর্ট।
খালাস
আমির হোসেন, জাহাঙ্গীর ওরফে বড় জাহাঙ্গীর, ফয়সাল (পলাতক), লোকমান হোসেন ওরফে বুলু, রনি মিয়া ওরফে রনি ফকির (পলাতক), খোকন (পলাতক), দুলাল মিয়া, রাকিব উদ্দিন সরকার ওরফে পাপ্পু, আইয়ুব আলী, জাহাঙ্গীর (পিতা মেহের আলী) ও মনির।
হাইকোর্টের রায়ের মধ্য দিয়ে এক যুগ আগে ঘটে যাওয়া নৃশংস ওই হত্যাকান্ডের নিম্ন আদালতের রায়ের ১১ বছর পর বিচারের পরিসমাপ্তি হয় হাই কোর্টে।