এর আগে গত ২৭ এপ্রিল বোয়ালমারী সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের দেওয়ানি মামলার (৫৩/২০২২) নোটিশ জারি করতে জারিকারক মো. কামাল হোসেন ও মেহেদী হাসান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। আদালতের কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ ও ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়ার হুমকির অভিযোগ ওঠে। এরপর ফরিদপুর আদালত থেকে লিখিতভাবে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ঘটনা জানিয়ে অবহিতকরণপত্র পাঠানো হয়। প্রধান বিচারপতি বিষয়টি শুনানি ও নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান। শুনানি নিয়ে ৭ জুন হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আদালত অবমাননার রুল দিয়ে নিজেদের ভূমিকা ব্যাখ্যা করতে বোয়ালমারীর ইউএনও ও তাঁর অফিসের নাজিরকে ২১ জুন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন।
এ অনুসারে সকালে বোয়ালমারীর ইউএনও মো. রেজাউল করিম ও তাঁর অফিসের নাজির উকিল মিয়া আদালতে হাজির হন। আদালতে ইউএনওর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শফিক আহমেদ ও মাহবুব শফিক। উকিল মিয়ার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোজাম্মেল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা
শুনানিতে ইউএনও মো. রেজাউল করিম নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তাঁর আইনজীবী বলেন, একটি ভুল–বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। বিচার বিভাগকে অবজ্ঞা করার কোনো উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না।
ইউএনও মো. রেজাউল করিমের উদ্দেশে আদালত বলেন, জারিকারক সমন নিয়ে গেছে, তখন ঘটনা ঘটেছে, এটি তো ফ্যাক্ট। জারিকারক দাওয়াত দিতে যাননি। আদালত সবার ওপরে। আদালত সমন দিলে তা মানতে হবে। ইউএনও মানে কী? আইন আছে বলেই ইউএনও। আইন ও আদালতকে সম্মান না করলে আপনাকেও কেউ সম্মান করবে না। আপনি যদি আইন না মানেন, কেউ আপনাকে মানবে না।
আদালত বলেন, নাজিরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি? তখন ইউএনও মো. রেজাউল করিম বলেন, কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
ইউএনও মো. রেজাউল করিমের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনি উপজেলা পর্যায়ে সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। আপনি বিষয়টি হ্যান্ডেল করতে পারেননি। আদালত অবমাননার কারণে আপনাকে আসতে হয়েছে। ক্যারিয়ারে কী হলো? ক্যারিয়ারে স্পট পড়ে গেল। জীবনে একটি স্পট পড়ে গেল। একটি লাইন লিখে দিলে আপনার জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।’
এ সময় ইউএনও মো. রেজাউল করিম বলেন, আইন ও আদালতের প্রতি সব সময় শ্রদ্ধাশীল।
এরপর ইউএনও অফিসের নাজির উকিল মিয়ার উদ্দেশে আদালত বলেন, আপনি মূল অপরাধী। আপনি সমনের নোটিশ গ্রহণ না করে গন্ডগোল করেছেন। সিনক্রিয়েট করেছেন।
শুনানির শেষ পর্যায়ে ইউএনওর উদ্দেশে আদালত বলেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে। তখন ইউএনও বলেন, ‘আদালতের আদেশ পালনে সচেষ্ট থাকব।’ আদালত বলেন, আপনার চেয়ার ও দায়িত্বের প্রতি নজর রাখবেন। মানুষ যত উচ্চ পদে যায়, তাকে তত বিনয়ী হতে হয়। আদালতকে সম্মান না করলে আপনিও সম্মান পাবেন না। আদালতকে সম্মান করা দায়িত্ব।
শুনানি নিয়ে আদালত ইউএনও রেজাউল করিম ও তাঁর অফিসের নাজির উকিল মিয়াকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আগামী রোববার আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।