গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের হাতে বন্দি স্বজনদের উদ্ধার করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের প্রতি ক্ষোভ ঝাড়লেন সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যরা। তারা নেতানিয়াহুকে মিথ্যাবাদী হিসেবে অভিহিত করেছেন। এমনকি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর উদ্দেশে একজনকে বলতে শোনা যায়— আপনার ক্যারিয়ার রক্ষার জন্য আমার সন্তানকে বলি দিতে প্রস্তুত নই।
হারজলিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ব্যক্তিরা পরে মিডিয়ায় বলেন, উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়েছে। আর নেতানিয়াহু তাদের দাবি পূরণে সরাসরি কোনো আশ্বাস দেননি। তিনি মোটামুটিভাবে আগে থেকে লেখা উত্তর দিয়েছেন। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়েছেন।
তারা বলেন, একপর্যায়ে তাদের অনেকে নেতানিয়াহুকে পদত্যাগ করতে বলেন।
ফাঁস হওয়া একটি উদ্ধৃতিতে নেতানিয়াহুকে বৈঠকে বলতে শোনা যায়— কাউকে ঠিক এখনই ফিরিয়ে আনার কোনো সম্ভাবনা নেই। সত্যিই যদি কেউ বলতে পারে যে, কোনো বিকল্প আছে, তবে কে তা প্রত্যাখ্যান করবে?
তার এই বক্তব্যে অনেকেই ক্ষুব্ধ হন। এমনকি অনেকে মাঝপথেই বৈঠক শেষ করে চলে যান।
কান পাবলিক ব্রডকাস্ট এমন তথ্যও দেয় যে, নেতানিয়াহু সমবেতদের বলেছেন— হামাস এমন সব দাবি উত্থাপন করেছে, যা এমনকি আপনাদের পক্ষেও গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তবে উপস্থিত লোকজন এতে শান্ত হয়নি। তারা নেতানিয়াহুকে মিথ্যা কথা বলার জন্য অভিযুক্ত করেন।
রায়েলের চ্যানেল থার্টিকে ড্যান মিরান বলেন, ‘সেখানে কী কথা হয়েছে, তার বিস্তারিত আমি বলব না। কিন্তু সেখানকার সবই ছিল এলোমেলো ও কুৎসিত। তারা কেবল বলেছে, আমরা এটা করেছি, সেটা করেছি। কিন্তু সিনওয়ার (হামাস নেতা ইয়াহইয়া সিনওয়ার) আমাদের মুক্তি দিয়েছে, তারা (ইসরায়েল সরকার) নয়। তারাই নাকি সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেছে—এমন কথায় আমি ক্ষুব্ধ হয়েছি। তারা একটা কিছুও নিয়ন্ত্রণ করেনি।’
উল্লেখ্য, শুক্রবার আবার যুদ্ধ শুরুর আগে এক সপ্তাহের বিরতির মধ্যে ১০৫ জন বেসামরিক নাগরিক মুক্তি পায় হামাসের তরফ থেকে। এদের মধ্যে ইসরাইলি ছিল ৮১ জন, থাই ২৩ জন, ফিলিপিনো ছিল একজন। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় এখনো ১৩৮ জন বন্দি রয়েছে। এদের মধ্যে প্রায় ২০ জন নারী।
চ্যানেল১২ এক বন্দির মায়ের বক্তব্য প্রচার করেছে। তাতে ওই মা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াভ গ্যালান্টের উদ্দেশে চিৎকার করে বলেন, আপনার বা এখানকার উল্লেখযোগ্য কারও ক্যারিয়ারের জন্য আমার ছেলেকে বলি দিতে আমি প্রস্তুত নই। একেবারেই নই। আমার ছেলে দেশের জন্য মরতে স্বেচ্ছাসেবক ছিল না। সে ছিল বেসামরিক নাগরিক। সে তার বাড়িতে নিজের বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল।… আমাকে প্রতিশ্রুতি দিন যে আমার ছেলেকে এবং অন্য বন্দিদের জীবিত উদ্ধার করে আনবেন।
এর জবাবে প্রতিরক্ষামন্ত্রী তা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন।
ইসরাইলি সেনা হাদার গোল্ডিনের (২০১৪ সাল থেকে তার লাশ হামাসের কাছে রয়েছে) বাবা সিমচা গোল্ডিন চিৎকার করে মন্ত্রীদের উদ্দেশে বলেন, আর কত হাদার গোল্ডিন আর রন আরাদ সেখানে থাকবে?
গত সপ্তাহে হামাসের বন্দিদশা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত আভিভা সেইগাল বৈঠকে কথা বলেন। তার স্বামী, মার্কিন নাগরিক, এখনো বন্দি রয়েছে গাজায়। তিনি বলেন, আমাদের ওপর বিমান থেকে ফেলা বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। আর এ সময় আমাদের আটককারী হামাসের সদস্যরা স্রেফ ঘুমিয়ে ছিল। আপনাদের বিমান হামলার তোয়াক্কা তারা করে না।