চীন ও ভারত সফর নিয়ে সমালোচনাকারীদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতে গেলাম দেশ বেচে এলাম, চীনে গেলাম খালি হাতে ফিরে এসেছি। তাঁরা এগুলো জেনে-বুঝে বলেন, নাকি আমাকে হেয় করতে বলেন, বুঝি না। এটা তাঁদের মানসিক অসুস্থতা।’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অনুদান, সুদমুক্ত ঋণ, রেয়াতি ঋণ ও বাণিজ্যিক—এই চার ধরনের আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। এই চারটি প্যাকেজের আওতায় চীন বাংলাদেশকে দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ প্রদানে সম্মত হয়েছে।’
চীন ও ভারত সফর নিয়ে সমালোচনাকারীদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতে গেলাম দেশ বেচে এলাম, চীনে গেলাম খালি হাতে ফিরে এসেছি। তাঁরা এগুলো জেনে-বুঝে বলেন, নাকি আমাকে হেয় করতে বলেন, বুঝি না। এটা তাঁদের মানসিক অসুস্থতা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, ‘চীন সফরে ২১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সাতটি ঘোষণাপত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমি জানি না, এর পরও যাঁরা সমালোচনা করছেন, তাঁরা জেনে-বুঝে করছেন কি না। সব সময় আমার বিরুদ্ধে নেতিবাচক কথা, গুজব ছড়ায়। আমি গুরুত্ব দিই না। তাঁদের বলতে দিন।’
চীন সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফেরার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অসুস্থ মেয়েকে রেখে চীন সফরে গিয়েছিলাম। অফিশিয়াল কাজ ১১ তারিখেই শেষ হয়ে যায়। বিকেলে আসার কথা ছিল, সকালে চলে এসেছি। ছয় ঘণ্টায় এত বড় তোলপাড় হবে বুঝিনি। অফিশিয়াল কাজ শেষ হয়ে গেলে আগেও সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে এসেছি। সেখানে বেড়ানোর, শপিং করার নেই। তাই আগেই চলে আসি। সেটাকে রংচং মাখিয়ে কথা বলছে।’
সেখানে চীন সফর ছাড়াও দেশের চলমান নানা প্রসঙ্গ উঠে আসে। বিভিন্ন সেক্টরের দুর্নীতি, কোটাবিরোধী আন্দোলন, শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে কেউ বিসিএস ক্যাডার হয়েছে প্রমাণ পেলে তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারির বিষয়টি আদালতে চ্যালেঞ্জ ও রায় প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা মামলা করল, সেই মামলায় উচ্চ আদালত যদি কোনো রায় দেন, সেখানে আমাদের তো কিছু করার নেই। আদালতে রায় হয়েছে, রায়ের বিরুদ্ধে আমার দাঁড়ানোর কোনো অধিকার নেই। সেটা তো সংবিধানও বলে না। পার্লামেন্টের কার্যপ্রণালীও বলে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে কোনো রায় না আসে, ততক্ষণ আমাদের কোনো কথা থাকে না। এটা বাস্তবতা, এই বাস্তবতা আমাদের মানতে হবে।’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপরে হামলার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি একজন প্রেসিডেনশিয়াল ক্যান্ডিডেট, তাঁর ওপর এ ধরনের হামলা করা, আমরা এটার নিন্দা জানাই অবশ্যই।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমেরিকা তাদের গণতন্ত্র নিয়ে অনেক গর্ববোধ করে, অথচ সেখানে দেখা যাচ্ছে—আমরা তো গুলি-বোমা খেয়ে অভ্যস্ত, অনবরত খাচ্ছি, সেখানে একজন অপনেন্টকে এভাবে গুলি করা, তাও আবার সে সাবেক প্রেসিডেন্ট, সে খুব অল্পের জন্য বেঁচে গেছে, কিন্তু তার একেবারে কানের ওপর দিয়ে চলে গেছে, যদি একটু এদিক-ওদিক হতো, সে আর বাঁচত না। এটা আমেরিকার মতো জায়গায় হয় কিভাবে? আমেরিকার মতো সভ্য দেশে, যারা গণতন্ত্রের এত বড় প্রবক্তা, সে দেশে এই ঘটনা ঘটবে কেন? সেটাও তো আমাদের এক প্রশ্ন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ওরা সরকারকে দায়ী করেনি, আর প্রেসিডেন্ট বাইডেনও এটাকে নিন্দা করছে যে এটা গ্রহণযোগ্য না, কাজেই এই এটুক সভ্যতা তার আছে। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমাদের দেশে যে দোষারূপ করার চেষ্টা, তাদের এখান থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত। তবে এই ঘটনাটা সত্যি খুব দুঃখজনক। একমাত্র প্রেসিডেনশিয়াল ক্যান্ডিডেট, তাকে এভাবে হামলা করা বা ইয়ে করা, তারা এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’