বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশের তালিকায় বাংলাদেশ ৪৭তম স্থানে রয়েছে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। এতে দাবি করা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র ৮ মাসে বাংলাদেশকে ৪৭তম ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্ট থেকেও এ দাবি করা হয়।
এই দাবির সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ইউএস নিউজ নামে একটি ওয়েবসাইটের নাম।তবে এই দাবিটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে তথ্যের সত্য-মিথ্যা যাচাইকারী নেটওয়ার্ক “রিউমর স্ক্যানার বাংলাদেশ”।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ সংক্রান্ত তালিকা সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছে ২০২৪ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। সেখানে র্যাংকিংয়ের জরিপ হয়েছে ২০২৪ সালের ২২ মার্চ থেকে ২৩ মে পর্যন্ত।
অর্থাৎ, সর্বশেষ যে র্যাংকিং ইউএস নিউজের ওয়েবসাইটে রয়েছে তা বাংলাদেশের বিগত সরকারের সময়ে হওয়া জরিপের ওপর ভিত্তি করে প্রকাশিত হয়েছিল।
মূলত, ২০২৫ সালের র্যাংকিং এখনও প্রকাশই করেনি ইউএস নিউজ। রেওয়াজ অনুযায়ী তা এ বছরের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হবে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ইউএস নিউজ মূলত মার্কিন মিডিয়া কোম্পানি যারা সংবাদের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বিভিন্ন ক্যাটাগরির র্যাংকিং ও বিশ্লেষণ প্রকাশ করে আসছে।
রিউমর স্ক্যানার ইউএস নিউজের ওয়েবসাইটের বিভিন্ন সময়ের আর্কাইভ বিশ্লেষণ করে দেখেছে, সাইটটি প্রতিবছরের সেপ্টেম্বরে এই র্যাংকিং প্রকাশ করে থাকে এবং এ সংক্রান্ত জরিপ হয় সে বছরের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে।
২০২৩ সালেরটি প্রকাশিত হয়ছিল ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর (জরিপ হয়েছিল ১৭ মার্চ থেকে ১২ জুন)। ৮৭ দেশের মধ্যে ক্ষমতার দিক থেকে সেবছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪০তম, আর সবমিলিয়ে ৬৯তম।
২০২২ সালের তালিকাটি প্রকাশিত হয়ছিল ওই বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর (জরিপ হয়েছিল ৩০ এপ্রিল থেকে ১৩ জুলাই)। ৮৫ দেশের মধ্যে ক্ষমতার দিক থেকে সেবছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৪৪তম, আর সবমিলিয়ে ৭১তম।
সম্প্রতি দাবি করা হয়, বাংলাদেশ ১২৩তম স্থান থেকে উন্নীত হয়ে বর্তমানে ৪৭তম অবস্থানে এসেছে। তবে ওয়েবসাইটটির আর্কাইভ বিশ্লেষণ করে রিউমর স্ক্যানার জপানিয়েছে, বাংলাদেশ এই র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয় ২০২২ সালে। ওই বছর থেকে পরবর্তী সময়গুলোতে র্যাঙ্কিংয়ে অন্তর্ভুক্ত দেশের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২০২২ সালে ৮৫টি, ২০২৩ সালে ৮৭টি এবং ২০২৪ সালে ৮৯টি। এ পর্যন্ত কোনো বছরেই র্যাংকিংয়ে ১২৩টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, ফলে বাংলাদেশের কখনো ১২৩তম অবস্থানে থাকার দাবি বাস্তবসম্মত নয়।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের এই র্যাংকিং নিয়ে হঠাৎ আলোচনা শুরুর প্রেক্ষাপটও জানার চেষ্টা করেছে রিউমর স্ক্যানার। Global Statistics নামের একটি এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে গত ৬ এপ্রিল রাতে ইউএস নিউজকে সূত্র দেখিয়ে শিরোনামে ২০২৫ সালের র্যাংকিং দাবি করে এ সংক্রান্ত প্রথম পোস্টটি করা হয় বলে নিশ্চিত হয়েছে রিউমর স্ক্যানার।